আমরা সাধারণত নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলে থাকি। কিন্তু তার পরও কিছু কিছু জায়গায় বিশেষ করে পুরুষের তুলনায় বেশি সুবিধা চাই। কেন চাই, তা নিয়ে পুরুষের বাঁকা-বাঁকা কথা প্রায়ই শুনতে হয়, বাসে সংরক্ষিত নারী আসন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ইস্যু। তবে বাসে কিছু সংরক্ষিত আসন থাকে শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধ বা সঙ্গে ছোট শিশু আছে এমন মায়েদের জন্য। বাসে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকে মাত্র ছয়টি থেকে নয়টি। কোনো কোনো বাসে নাকি ১৩টিও থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সংরক্ষিত আসনগুলো থাকে ইঞ্জিনের পাশে। এটা ভীষণ অবমাননাকর। অপর দিকে বাসে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষ বসলে সেক্ষেত্রে নারীরা আসনগুলো ছেড়ে দেয়ার জন্য বললে কেউ কেউ বলেন, সংরক্ষিত কথা কোথায় লেখা আছে? লেখা দেখালে আর কোনো কথা বলেন না। আবার উঠতেও চান না। এর সমাধান কী?
২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, বড় বাসে ৯টি, মিনিবাসে ছয়টি ও বিআরটিসি বাসে ১৪টি আসন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। মজার বিষয় হলো নারীর সিটে বসলে দণ্ড আছে, তা অনেকেই জানেন না। বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কেউ বসলে বা তাদের বসতে না দিলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাসে উঠে দেখা যায় ওইসব সংরক্ষিত আসনও কিছু বীর পুরুষ সদর্পে দখল নিয়ে বসে আছেন। তাদের পাশে নারী যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও তারা আসন ছেড়ে ওঠেন না। এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এক জরিপে জানিয়েছে, গণপরিবহনে যাতায়াতকারী নারীদের ৯৪ শতাংশই যৌন হয়রানির শিকার হন। শরীরে নোংরা স্পর্শ থেকে গণধর্ষণ এবং গণপরিবহনে প্রায় সব ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। কিন্তু এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ দরকার। গণপরিবহনে নারী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তাই তাদের চলাফেরাকে মসৃণ করার জন্যই আসন সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে সংরক্ষিত আসন এত কম কেন? এজন্যই বাসে নারীদের জন্য কমপক্ষে ২০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান করা যেতে পারে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, একজন নারী হচ্ছেন একজন মা, একজন বোন, একজন কন্যা কিংবা একজন স্ত্রী। তাই তাদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় দায়িত্ব। একটি সুন্দর নারীবান্ধব পরিবহন খাত ও সমাজ গঠনে এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই যথেষ্ট।
মো. তোফাজ্জল হোসেন
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়