Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 10:42 pm

বিআরটিসির ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ঘটুক

‘বরিশালে বিআরটিসির বাস ডিপোয় অচল গাড়ি বেশি’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক শেয়ার বিজে, তা রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির অব্যবস্থাপনার বিষয় নতুন করে সামনে এনেছে। কয়েক দিন আগে শেয়ার বিজেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ‘ভলভো বাস’ ভাঙারি হিসেবে বিক্রির খবর।

খবরে জানা যায়, সচল গাড়ির অভাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বরিশাল বাস ডিপো প্রত্যাশিত যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র সরকারি ডিপোটির ৮০টি বাসের মধ্যে চলাচলযোগ্য ৪০টিরও কম। ৩০টি বাস দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এসব বাস বিক্রিরও সুপারিশ করা হয়েছে।

আমরা লক্ষ করছি, বিআরটিসির কোনো বাসই আয়ুষ্কাল পূর্ণ করতে পারে না। কেনার দু-চার বছরের মধ্যেই অচল হয়ে ডিপোয় স্থান করে নেয় সংস্থাটির বেশিরভাগ বাস। বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত গণপরিবহন যেখানে ১০-১৫ বছর রাস্তায় দাবড়ে চলে, সেখানে বিআরটিসির বাস রাস্তায় নামার দু-তিন বছরের মধ্যেই অচল হয়ে পড়ছে। অথচ বিআরটিসির রূপকল্প ও অভিলক্ষ্য হলো নিরাপদ ও আধুনিক রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে যাত্রী পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি, ডিপোর বহরে আধুনিক যানবাহন সংযোজন এবং নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। অকেজো গণপরিবহন দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি কীভাবে রূপকল্প বাস্তবায়ন করবে, আমাদের বোধগম্য নয়।

বিআরটিসির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সর্বাপেক্ষা উন্নত ও মানসম্পন্ন বাসই বহরে যুক্ত করা হয়। সেটি যে সত্য নয়, তা সংস্থাটির ডিপোগুলোয় অকেজো গাড়ির সংখ্যা দ্বারাই প্রমাণিত হয়। যেসব বাস সড়কে চলাচল করে, সেগুলোও লক্কড়ঝক্কড়। অভিযোগ রয়েছে, নি¤œমানের বাস সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ না করা, চালক-শ্রমিকদের অদক্ষতা ও অবহেলা এবং কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় আয়ুষ্কাল পেরোনোর আগেই বিআরটিসির বাসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উম্মুক্ত প্রতিযোগিতায় বিআরটিসি বাস কেনা হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতো না। যেসব দেশ পরিবহন খাতে ঋণ দেয় বা দিয়ে থাকে, সেসব দেশের দেয়া শর্ত মেনে তাদের বাসই কিনতে হয়। ঋণদাতা দেশ বেশি দামে তাদের নিম্নমানের বাসই গছিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। মধ্যম আয়ের দেশ বা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এটি আমাদের জন্য স্বস্তিকর নয়। এর সঙ্গে যদি রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতি যোগ হয়, তা হলে আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগেই বাসগুলো অকেজো হবেই।

বরিশাল ডিপো থেকে পদ্মা সেতুর পশ্চিম প্রান্তের কাঁঠালবাড়ীতে প্রতিদিন গড়ে ১৮টি বাস যাত্রী পরিবহন করছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি রুটে বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে। সম্প্রতি এ ডিপোর জন্য পাঁচটি এসি বাসের চাহিদা দেয়া হলেও সাড়া দেয়নি সদর দপ্তর। এ ডিপোর বাস সংকটে দেশের অন্য ডিপোর গাড়ি এ অঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করছে।

বেসরকারি খাতের দৌরাত্ম্য থেকে সেবাগ্রহীতাদের রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়েই বিআরটিসির পথ চলা। এখন নিজেই খুঁড়িয়ে চলছে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে। বেশি দামে বাস কেনা হবে আবার ক্রয়-পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণও করা হবে না, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ঘটিয়ে রূপকল্প ও অভিলক্ষ্য অর্জনে সংস্থাটিকে সর্বাত্মক প্রয়াস নিতে হবে।