নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর একই সঙ্গে আবেদন গ্রহণ বন্ধ করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বরাবর লিখিত প্রস্তাব জানিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। এছাড়া গ্রাহক হিসেবে লেনদেন সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের বিপরীতে আয়কর সনদপত্র সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ ও ডিলারদের কাছে পাঠানোর প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
জানা যায়, আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য অনুমোদন পাওয়া প্যাসিফিক ডেনিমস লিমিটেড এবং এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ডের আবেদন শুরু হয় একই তারিখ (১১ ডিসেম্বর ’১৬)। যদিও বস্ত্র খাতের প্যাসিফিক ডেনিমসের আইপিও আবেদন গ্রহণ চলে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে মিউচুয়াল ফান্ডটির আবেদন গ্রহণ। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে ডিবিএ বিএসইসির কাছে লিখিত এ প্রস্তাব দেয়।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএ প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাকি দাবিগুলোও নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেনে নেবে বলে আশা করছি। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে অন্যদিকে সামগ্রিক পুঁজিবাজারের জন্য এসব বিষয় ইতিবাচক হবে। একই সময়ে একাধিক কোম্পানির আইপিও আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধা হবে’ বলে মনে করেন তিনি।
ডিবিএ’র চিঠিতে গ্রাহক হিসেবে এককালীন নগদ লেনদেন সীমা পাঁচ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে ব্যক্তিগত হিসাব থেকে দৈনিক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ লেনদেন করতে পারেন, যা ১৯৯৯ সালের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে দেশের অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের আকার অনেক বড় হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ব্যাংকও গ্রাহক হিসেবে নগদ লেনদেনের সীমা এরই মধ্যে দ্ইু দফায় প্রথমে সাত লাখ ও পরে ১০ লাখে উন্নীত করেছে। শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও বড় আকারের লেনদেনের কথা বিবেচনা করে এটি ১০ লাখে উন্নীত করা দরকার।
প্রসঙ্গত, অর্থপাচার রোধে ব্যক্তি হিসাব থেকে নগদ লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস-১৯৮৭ এর ৮নং ধারার (সিসি) (ওয়ান) এ বলা হয়েছে, কোনো একক হিসাবের অর্থ গ্রহণ ও প্রদানে এককালীন নগদ হিসাবে পাঁচ লাখ টাকার সীমা অতিক্রম করা যাবে না।
লভ্যাংশের বিপরীতে কর সনদের বিষয়ে ডিবিএ জানিয়েছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশের বিপরীতে প্রত্যেক গ্রাহককে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ট্যাক্স সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয়। একজন বিনিয়োগকারী বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করায় প্রত্যেক কোম্পানিতে গিয়ে এ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য। গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে কোম্পানিগুলো ব্রোকারেজ হাউজে এ সনদপত্র পৌঁছে দিলে বিষয়টি সব পক্ষের জন্য সহজতর হয়। ফলে গ্রাহকদের হয়রানি কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ‘অর্থপাচার রোধে ১৯৯৯ সালে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত হিসাব থেকে দৈনিক নগদ লেনদেন সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। দেশের অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের বর্তমান বৃহৎ লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয়ে এটি কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকও এরই মধ্যে তা ১০ লাখে উন্নীত করেছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব এবং গ্রাহকের পোর্টফোলিওতে পুনঃমূল্যায়নজনিত ক্ষতির বিপরীতে সঞ্চিতি রাখার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবও করে আসছিল ডিবিএ। বুধবার বিএসইসির ৫৯৪তম কমিশন সভায় আরও এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে গ্রাহকের পোর্টফোলিওতে পুনঃমূল্যায়নজনিত ক্ষতির বিপরীতে সঞ্চিতি রাখার মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল ডিবিএ। ২০ ডিসেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কাছে এমন প্রস্তাব দেয় ডিবিএ।
পাশাপাশি ঋণাত্মক পোর্টফোলিওতে আটকে থাকা কয়েক হাজার কোটি টাকার শেয়ার স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরিয়ে আনতে মার্জিন ঋণ বিধিমালা, ১৯৯৯-এর একটি উপ-ধারার কার্যকারিতা স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।