বিএসইসির নিরাপত্তায় আনসার মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সরকার ঘোষিত গুরত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোভুক্ত (সিআইআই) প্রতিষ্ঠান। যে কোনো পরিস্থিতিতে সংস্থাটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো সচেষ্ট থাকে। চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিএসইসির নিরাপত্তা জোরদার করতে আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ জন আনসার সদস্য বিভিন্ন শিফটে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলে এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে বিএসইসির নিরাপত্তায় তিনটি শিফটে ১৫ থেকে ১৬ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৪ জন সদস্য অস্ত্রধারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন সদস্য চেয়ারম্যান ও কমিশনার ফ্লোরে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্য দুজন প্রধান ফটকের দায়িত্বে রয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ফ্লোরে একজন আনসার সদস্য অস্ত্রসহ দায়িত্ব পালন করছেন। আরেক একজন সদস্যকে দেখা যায় অস্ত্র ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে। এছাড়া লিফট থেকে বের হয়ে ওই ফ্লোরে প্রবেশের আগেই আরও একজন আনসার সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ভবনের ভেতরে ছাড়াও বিএসইসির সামনেও বেশ কয়েকজন আনসার সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে একজনকে বিএসইসিতে ঢোকার প্রবেশদ্বারে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, এখনও আনসার সদস্যদের পুরোপুরি দায়িত্ব বণ্টন করা হয়নি। কোনো ফ্লোরে কতজন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন, সেটাও নির্ধারণ করা হয়নি। এখনও অগোছালোভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন তারা। বর্তমানে সকালে ৬, বিকালে ৬ এবং রাতের শিফটে ৩ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। আনসার সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থার বন্দোবস্ত না হওয়ায় নিয়োজিত ২৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন না।

বিএসইসিতে দায়িত্বরত একজন আনসার সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে আমাদের ডিউটি। অফিস চলাকালীন আমাদের সবসময় ডিউটি পালন করতে হবে। নিরাপত্তার জন্য আমাদের শটগান দেয়া হয়েছে। আমাদের এখানে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় সবাই এখনও আসেনি। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি, থাকার ব্যবস্থার পরিবর্তে ভাতা প্রদান করা হতে পারে।

সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে আনসার নিয়োজিত করার প্রসঙ্গে সভায় আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে গুরত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর (সিআইআই) বিবেচনায় কমিশন ভবনের নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মহানগর আনসার দক্ষিণ জোন থেকে গত ১৭ মার্চ বিএসইসিতে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে উল্লিখিত শর্তে আবাসন সুবিধা ব্যতিরেকে মোট ২৬ জন সশস্ত্র আনসার নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এর আগে চলতি বছরের গত ৫ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে নির্ধারিত কমিশন সভা চলাকালে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সভাকক্ষে জোরপূর্বক এবং অনধিকার প্রবেশ করে তাদের অবরুদ্ধ করেন। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী একজন নির্বাহী পরিচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ প্রত্যাহারসহ ৪ দফা দাবিতে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের প্রায় চার ঘণ্টা বোর্ড রুমে আটকে রাখেন। এ সময় তারা ভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ সময় ভবনে সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, লিফট ও ভবনের সকল গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের উদ্ধার করেন। এর পরদিন (৬ মার্চ) রাতে অবরুদ্ধের ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমন ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান আশিকুর রহমান। তবে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন সকল কর্মকর্তা।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, বিএসইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। প্রক্রিয়া মেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আনসার সদস্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে ২৬ জন আনসার দেয়া হয়েছে। বিএসইসির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন আনসার সদস্যরা।