Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 4:30 pm

বিকল্প দেশ ও উৎসের সন্ধানে আমদানিকারকরা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: পশ্চিমা দেশগুলো চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরের সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ায় আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনগুলো ইউক্রেন থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়েছে গম, ভুটা, সূর্যমুখী তেল, সরিষাসহ শস্যজাতীয় পণ্যের আমদানি। যদিও আগের আমদানি দিয়ে দেশে আগামী কয়েক মাসের গমসহ শস্য জাতীয় পণ্যের চাহিদা মেটানো যাবে। তবে এরই মধ্যে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা বিকল্প দেশ ও উৎসের সন্ধানে তৎপর হয়ে উঠেছেন।

ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে গমের চাহিদা বছরের ৭৫ লাখ টন। আমদানিকৃত গমের সিংগভাগ চালানই আসে কানাডা, রাশিয়া, ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা, ভারত ও ইতালি থেকে। এর মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টন আমদানি হয়। যদিও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য হওয়ায় এটি আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। গমের মতো রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ভুটা, সূর্যমুখী তেল, সরিষাসহ শস্যজাতীয় পণ্য আমদানি হয়। পশ্চিমা দেশগুলো চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আর চলমান যুদ্ধের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ায় আন্তর্জাতিক শিপিং লাইসনগুলো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে দুই দেশের সঙ্গে অঘোষিতভাবে বন্ধ বৈদেশিক বাণিজ্য। এর প্রভাবে দেশের বাজারে গমসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে গমের দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ছে। একইভাবে পামঅয়েলের দাম মণে ১৫০ টাকা বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জ এলাকার একাধিক পাইকারি বাজারের বিক্রেতারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উভয় দেশের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের বন্দরগুলোয় স্থবির হয়ে পড়েছে জাহাজ চলাচল। বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় নতুন কোনো ক্রয়াদেশও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আমাদের বিকল্প দেশ ও উৎস খুঁজতে হবে। যদিও আমাদের চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি এ অঞ্চল থেকে গম আমদানি হয়। একইভাবে বৈশ্বিক সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের ৬০ শতাংশই আসে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল থেকে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৬ শতাংশই রপ্তানি করে এ অঞ্চল। আর এখান থেকে সর্বাধিক সূর্যমুখী তেল ক্রয় করে ভারত। যার প্রভাব পরোক্ষভাবে হলেও আমাদের আমদানির ওপর পড়ছে। এছাড়া আমাদের ব্যাংকগুলো সুইফট জটিলতায় নতুন করে এলসি ওপেন করছে না। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব উপকরণ সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাংলাদেশে মোট ৫৩ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি হয়েছিল। আগের অর্থবছরের গম আমদানি হয়েছে ৫৫ লাখ ১২ হাজার টন। যদিও গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১২ মাসে গম আমদানি হয়েছিল ৫০ লাখ ১২ হাজার টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৫১ লাখ ২০ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার টন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার টন।

আন্তর্জাতিক শিপিং লাইন মেডিটেরিয়ান শিপিংয়ের মহাব্যবস্থাপক আজমীর হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আমাদের শিপিং কার্যক্রম গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে পড়েছে। আর পহেলা মার্চ থেকে রাশিয়ার সঙ্গে কার্যক্রম বন্ধ আছে। যদিও এ দুই দেশের সঙ্গে আমাদের অনেক বেশি লেনদেন ছিল। যুদ্ধ বন্ধ হলে ইউক্রেনের সঙ্গে আবারও কার্যক্রম শুরু হবে। অন্যদিকে রাশিয়ার ওপর আরাপিত নিষেধাজ্ঞা উঠলে তখন কার্যক্রম শুরু হবে।

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ায় দুই দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এমনকি শিপিং লাইনগুলো ইউক্রেন থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে আমাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এলসি নেয়া বন্ধ রেখেছে। অর্থাৎ, অঘোষিতভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বন্ধ হয়ে গেছে গম, ভুটা, সূর্যমুখী তেল, সরিষাসহ শস্যজাতীয় পণ্য আমদানি। যদিও আগের আমদানি দিয়ে আগামী কয়েক মাস দেশের গমসহ শস্যজাতীয় পণ্যের সংকট হবে না। এর মধ্যে ভোগ্যপণ্যেও আমদানিকারকরা বিকল্প দেশ ও উৎসের সন্ধানে তৎপর হয়েছে।

আমদানি বাণিজ্য, সুইফট বন্ধ হওয়া এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে খাতুনগঞ্জভিত্তিক নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একজন আমদানিকারক বলেন, আমাদের বুকিংকৃত গম ইউক্রেন থেকে চলতি মাসের ১০ তারিখে জাহাজ বোঝাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আর কিছু হবে না। এটা নিয়ে চিন্তায় আছি। বর্তমান পরিস্থিতি অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত। কিন্তু পরিস্থিতির ব্যাপকতা নিয়ে এ মুহূর্তে মন্তব্য করা যাবে না। তবে এটা চিন্তার বিষয়। কিন্তু আমি উদ্বিগ্ন নই। তবে আমরা বিকল্প দেশ থেকে আমদানির জন্য কথা বলছি। যদি যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে তখন সংকট ও জটিলতা দেখা দিতে পারে।