মো. আসাদুজ্জামান নূর: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। ব্যাপক বিক্রয় চাপের কারণে দুই-একটি ছাড়া সব খাতেই ব্যাপক দরপতন দেখা গেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল ট্যানারি খাত। দর বৃদ্ধির সঙ্গে লেনদেনও সর্বোচ্চ হয়েছে খাতটিতে।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুনাফা গ্রহণ শেষে ভালো শেয়ারে পুনর্বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার পর্যবেক্ষণে রাখছেন তারা। এ জন্য লেনদেনে অংশগ্রহণ কমেছে। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারের এমন মন্দার পালে হাওয়া দিচ্ছে নতুন একটি ইস্যু। তা হলো: নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও রিপোর্টিং-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলার।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাজার মূল্যে নির্ধারণ করা হবে। যদিও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ করা হোক। এই নির্দেশনার পরেই বুধবার ডিএসইর সব সূচক প্রথমভাগে বেশ ইতিবাচক থাকলেও শেষদিকে নেতিবাচক প্রবণতায় মোড় নেয়। দিন শেষে সূচক কোনো রকমে ইতিবাচক রাখা হলেও, বেশিরভাগ সিকিউরিটিজের দরপতন দেখা যায়। এর পরের দিন বড় পতন দেখা দেয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অজানা আতঙ্ক ভর করে। সেই আতঙ্ক এখনও কাজ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রোববার ডিএসইতে এক হাজার ১৪০ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এটি আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকার।
লেনদেন সর্বোচ্চ হয়েছে ট্যানারি খাতে। শুধু তাই নয়, ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ লেনদেনের সঙ্গে খাতটিতে ৮৩ শতাংশের বেশি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে লেনদেনের শীর্ষে থাকা বাকি খাতগুলোয় দরপতন দেখা গেছে।
গতকালের লেনদেনের বেশি অবদান রেখেছে ওষুধ ও রসায়ন ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ, প্রকৌশল ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ, বিবিধ আট দশমিক ৮৭ শতাংশ, বস্ত্র আট দশমিক ৬৯ শতাংশ ও খাদ্য খাতে ছয় দশমিক ৮৭ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন ছয় শতাংশের নিচে ছিল।
এদিকে খাতগুলোর মধ্যে ওষুধ ও রসায়নে ৭৪ শতাংশ, প্রকৌশলে ৬৪ শতাংশ, বিবিধ ৫৩ শতাংশ, বস্ত্র ৭৬ শতাংশ ও খাদ্য খাতে ৪৬ শতাংশের বেশি কোম্পানির দরপতন হয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৮০টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৭টির, কমেছে ২৭০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৩টির। এর প্রভাবে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ছয় হাজার ৯২৬ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ৯ পয়েন্ট কমেছে।
সূচক পতনের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোন। কোম্পানিটির শেয়ারদর শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ কমায় সূচক ৫ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমিয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড। আর ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের কারণে সূচক কমেছে ৪ দশমিক ০১ পয়েন্ট। এছাড়া ওয়ালটন হাইটেক, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, রবি, পাওয়ার গ্রিড, জেনেক্স ইনফোসিস ও ইউনাইটেড পাওয়ার সূচক হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানিই সূচক কমিয়েছে ৩২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট।
বিপরীতে সূচক বাড়িয়েছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার, লিনডে বিডি, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, এক্মি পেস্টিসাইডস, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, অ্যাটলাস বাংলাদেশ, ইস্টার্ন কেবল্স, রেকিট বেনকিজার, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।