‘বিক্রয় পেশার দক্ষতা উন্নয়নে সেতুবন্ধ স্কুল অব সেলস ম্যানেজমেন্ট’

ড. শরীফুল ইসলাম মার্কটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী। দীর্ঘ ২৪ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিতে মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের ঊর্ধ্বতন নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একই বিষয়ে এমবিএ ও ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। সম্প্রতি এক কথামালায় মার্কেটিং পেশা ও স্কুল অব সেলস ম্যানেজমেন্টের নানা দিক সম্পর্কে তার ভাবনা জানিয়েছেন।

মানবসম্পদে সম্ভাবনাময় আমাদের দেশ। এখানের ৬৬ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। তবু কর্মদক্ষ কিংবা মানব মূলধন হিসেবে এই মানবসম্পদের হার অপ্রত্যাশিতভাবে কম। মানব মূলধন একটি কার্যকর বৈশ্বিক শব্দ, যা মানবসম্পদের উৎপাদনমুখী কর্মদক্ষতা ও বিনিয়োগী সম্পদের ধারণা পোষণ করে থাকে। আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মক্ষম বহরকে মূলধন হিসেবে গড়ে তোলা চলমান সময়ের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
২০১৭ সালে মানব মূলধন গড়ে তোলার উদ্দেশে যাত্রা করে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সেলস ব্যবস্থাপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘স্কুল অব সেলস ম্যানেজমেন্ট (এসএসএম)’। বিক্রয় ব্যবস্থাপনার বাস্তবিক কৌশল এবং প্রায়োগিক বাস্তব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
এক হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একক পেশাজীবী কমিউনিটি হচ্ছে সেলস পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীরা। এ পেশায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ সরাসরি যুক্ত রয়েছেন।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্মুখভাগের এই জনবল প্রতিনিয়ত তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছেন। প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবসার আয়ের পাইপলাইনার হিসেবে কাজ করেন বিক্রয় পেশাজীবীরা। যদি এ কর্মক্ষেত্রের মানুষগুলোর দক্ষতা এবং তা উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য করি তবে নিছক কিছু অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সবাই সেলস টিম প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের পদক্ষেপে অনগ্রসর বা পিছিয়ে আছে। তাছাড়া দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় এ বিষয়ে তত্ত্বীয় শিক্ষাদান করলেও ব্যবহারিক শিক্ষাদানের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।
স্কুল অব সেলস ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশের সেলস পেশায় কর্মরত বা যারা কাজ করছেন তাদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি এই পেশার কর্মযোগ্যদের আগ্রহ তৈরিতে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানব মূলধন তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে বিক্রি পেশাকে একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশায় উত্তরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগেই তাদের কর্মক্ষেত্রের যোগ্যতা এবং আগ্রহী করে গড়ে তোলার নিমিত্তে লন্ডন এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, ইউকের সঙ্গে যৌথভাবে ‘স্কুল অব সেলস ম্যানেজমেন্ট’ শুরু করতে যাচ্ছে এমপ্লয়াবিলিটি স্কিল প্রোগ্রাম, যা দেশের মেধাবী গ্র্যাজুয়েটদের বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য সহায়ক হবে।
‘স্কুল অব সেলস ম্যানেজমেন্ট’ বিক্রয় পেশার সব পদের জনবলসহ প্রান্তিক বিক্রয় প্রতিনিধির কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশে সব বিভাগীয় শহরে এসএসএম সেন্টার কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে আগ্রহী মানুষ তার কাক্সিক্ষত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মে প্রবেশ করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানগুলো পাবে তাদের প্রত্যাশিত কর্মী। বর্তমানে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা সমপর্যায়ের পদের মাসিক গড় পতন বা চলে যাওয়ার শতকরা হার প্রায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় দীর্ঘ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ‘প্লাগ অ্যান্ড প্লে’ প্রক্রিয়া নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি যৌক্তিক ব্যবসায়িক সম্পর্কের সেতুবন্ধ তৈরি করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের বিক্রয় পেশা একটি মর্যাদাপূর্ণ, সৃষ্টিশীল ও আগ্রহের পেশা হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। দেশের দক্ষ মেধাবী পেশাজীবীদের বাস্তবিক প্রশিক্ষণে পরিচালিত ‘স্কুল অব সেলস ম্যানেজমেন্ট’ অচিরে বিক্রয় পেশাজীবী তৈরির সুদক্ষ কারিগরে পরিণত হবে।