বিজনেস আইডিয়া : ডেইরি ফার্ম

নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়Ñএমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন

ডেইরি ফার্ম থেকে আদর্শ খাবার দুধ পাওয়া যায়। এছাড়া গবাদিপশু থেকে আমিষের চাহিদা মেটাতে মাংসসহ জ্বালানি হিসেবে গোবর ও জৈবসার পাওয়া যায়। তেমনি এ ধরনের ফার্ম থেকে বেশ ভালো আয়ও করা সম্ভব। তাই ডেইরি ফার্মের চাহিদা ও বাজার দিন দিন বাড়ছে। এ খাতটি বিকাশের কারণে দেশে অনেক সহযোগী শিল্প গড়ে উঠেছে। দুধ শীতলীকরণ, পান্তুরাইজেশন, প্যাকিংসহ দুধনির্ভর বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের বাজার তৈরি হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন আর্থিক সংগতি ও অভিজ্ঞতা। তাই আপনিও এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
সুবিধা
খাদ্য, পানি গ্রহণ ও দুধ দোহন একই স্থানে করা যায়

প্রতিকূল আবহাওয়ায় গবাদিপশু নিরাপদ রাখা যায়

কৃত্রিম প্রজননের জন্য বেশ সুবিধাজনক

অল্প জায়গায় পালন করা যায়
স্থান নির্বাচন
যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ও বিক্রির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে সেসব এলাকার আশেপাশে ডেইরি ফার্ম দিতে হবে। চারপাশে উঁচু দেয়াল, পরিবেশসম্মত আবাসন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, বিশ্রাম ও হাঁটাচলার জন্য জায়গা থাকতে হবে। বিশেষ করে গ্রামে গরুর ফার্ম গড়ে তোলাই শ্রেয়। এ ক্ষেত্রে উন্নত জাতের গাভি বাছাই করতে হবে। উন্নত জাতের গরু বাছাই না করলে সারা বছর রোগবালাই লেগে থাকবে।
পরিচর্যা
ডেইরি ফার্ম একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। তাই উন্নত জাতের গাভি ডেইরি ফার্মের জন্য সহায়ক। সেক্ষেত্রে বিদেশি জাত বেছে নেওয়া যেতে পারে। গাভীর জন্য শক্ত মাটি ও কংক্রিটের পরিবর্তে বালির মেঝে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। বালির মেঝে তৈরি করতে হবে বিশেষ প্রক্রিয়ায়। ফার্মটি অবশ্যই ইটের টুকরো, লোহার টুকরো ও অন্যান্য ধারালো বস্তুমুক্ত হতে হবে। রোগের সংক্রমণমুক্ত বালু সংগ্রহ করতে হবে। বালির মেঝে যেন ভেজা না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য দিনে কমপক্ষে দুবার গোবর পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন বালি ওলটপালট করে দিতে হবে। এতে রোগ-জীবাণু বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। ছয় মাস অন্তর শেডের পুরোনো বালি ফেলে দিয়ে নতুন বালি দিতে হবে। প্রতিটি গবাদিপশুর জন্য আলাদা মশারি, ফ্যান ও ময়লা পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আলোর জন্য লাইটিং এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও নজর দিতে হবে।
খাবার
গবাদিপশুর খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন খাবার না পেলে সঠিক পরিমাণ দুধ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে ধানের কুঁড়া, গমের ভুসি, ছোলা, খেসারির খোসা, লবণ, খৈল, ঘাস প্রভৃতি পর্যাপ্ত সংগ্রহ করে রাখতে হবে। বাসি ও পচা খাবার দেওয়া যাবে না। এতে করে পশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। খাদ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পুষ্টিমানসম্পন্ন হতে হবে। গাভির গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন সময়ে আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হবে। পশু চিকিৎসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।
পুঁজি
একটি গাভি কিনতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রথমেই বিশাল ফার্ম তৈরিতে হাত না দিয়ে ছোট পরিসরে কাজে হাত দেওয়া ভালো। চার থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে শুরু করতে পারেন। পরে আস্তে আস্তে ফার্মকে সম্প্রসারণ করাই উত্তম। দুটি গরুর জন্য একজন দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে। তবে গাভীর জাত অনুযায়ী দাম কম-বেশি হতে পারে।
লাভ
বর্তমানে বিভিন্ন মিষ্টি দোকান ও কনফেকশনারির লোকজন সরাসরি ফার্মে এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। গড়ে একটি গরু থেকে মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করা সম্ভব। ফার্ম গড়ে তোলার পরপরই দুধ বিক্রির জন্য প্রচার চালাতে হবে। খরচ বাদে এই লাভ একটি পরিবারের জন্য কম নয়।
শীত মৌসুম দুধেল গাভির জন্য আরামদায়ক। এ মৌসুমে দুধ উৎপাদন ও মাখনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আর গরম, বর্ষা এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।
প্রশিক্ষণ ও ঋণ
ডেইরি ফার্ম দেওয়ার আগে প্রশিক্ষণ নিতে পারলে ভালো হয়। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় পশু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে গবাদিপশুর তিন থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া একজন অভিজ্ঞ গবাদিপশু খামারি ও কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে যুব উন্নয়ন, কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে জামানত ছাড়া ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে।

শিপন আহমেদ