Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 5:24 pm

বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিল ঘোষণা করলেন নরেন্দ্র মোদি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ব্যাপক কৃষক বিক্ষোভের জন্ম দেয়া বিতর্কিত তিনটি নতুন কৃষি আইন বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জš§দিনের উৎসব গুরুপর্ব উপলক্ষে দেয়া এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি। একই সঙ্গে জনসম্মুখে ক্ষমা চান তিনি। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছ হƒদয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। কৃষকদের আমরা বোঝাতে পারিনি। আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল।’ এ ঘোষণার পরই বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন‘কৃষকদের জয়, ঔদ্ধত্যের পরাজয়।’ খবর: আনন্দবাজার।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিতর্কিত এসব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি সীমান্তে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষকেরা। তবে উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের মতো কয়েকটি বড় রাজ্যে আগামী বছরের নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এই ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

গুরুপর্ব উৎসব মূলত পালিত হয়ে থাকে ভারতের পাঞ্জাবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গুরুপর্ব উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমাদের তপস্যায় হয়তো কোনো ঘাটতি ছিল, যে কারণে আমরা আইনগুলো নিয়ে কৃষকদের বোঝাতে পারিনি। কিন্তু আজ প্রকাশ পর্ব, কাউকে দোষারোপের সময় নয়। আজ আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, আমরা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও আইন তিনটির পক্ষেই অবস্থান নেন মোদি। তিনি বলেন, এসব আইনের উদ্দেশ্য ছিল সংস্কার। মূলত দেশের ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্যই আইন করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। মোদি বলেন, ‘যা কিছুই করেছি তা কৃষকদের জন্যই, যা কিছুই করছি তা দেশের জন্য।’

বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন পাসের পর ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানের হাজার হাজার কৃষক দিল্লির বাইরে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। এসব আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।

নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেয়ার পরও শীর্ষ কৃষকনেতা রাকেশ তিকাইত বলেন, পার্লামেন্টে আইন তিনটি প্রত্যাহার হওয়ার আগ পর্যন্ত বিক্ষোভ থামাবেন না তারা। আগামী ২৯ নভেম্বর পার্লামেন্টের নতুন অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো জনসম্মুখে ক্ষমা চাইলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রথম ঘটনাটি হলো, ২০২০ সালেল মার্চে কভিড সংক্রমণের জন্য লকডাউনের ঘোষণা, যার জেরে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে চরম সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে। তার সেই সিদ্ধান্তে ভারতজুড়ে বিপুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল মোদিকে। শেষমেশ তাকে বলতে হয়েছিল, ‘এই কঠিন পদক্ষেপ আপনাদের জীবনে অনেক সমস্যা ডেকে এনেছে, বিশেষ করে গরিব মানুষের। সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। জানি আপনাদের মধ্যে কিছু মানুষ আমার এই সিদ্ধান্তে অখুশি হয়েছিলেন, কিন্তু এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে এ সিদ্ধান্ত নিতেই হতো।’

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীÑএই দীর্ঘ সফরে নানা বিতর্কের মুখে পড়েছেন মোদি। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তও চলে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সে সময়ও মোদির ক্ষমা চাওয়ার জন্য জোরালো দাবি উঠেছিল, কিন্তু তিনি চাননি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘যদি কোনো অপরাধ করে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করা উচিত নয়।’ তখনও তিনি নিজের ক্ষমা না চাওয়ার সপক্ষে জোরগলায় বলেছিলেন, ‘যা বলার ছিল তা-ই বলেছি। জনতার আদালত থেকে আমি স্বচ্ছভাবে বেরিয়ে এসেছি।’