নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলো ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।
জানা যায়, বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৬২টি ব্যাংক। এর মধ্যে সবাই কৃষিঋণে অংশ নিয়েছে। এমনকি দেশে কার্যরত আটটি বিদেশি ব্যাংকের সবাই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে। কিন্তু কিছু ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এমন ব্যর্থ ব্যাংকের সংখ্যা সাতটি।
বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী রোববার কৃষিনীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের তুলনায় এই বছর ব্যাংকিং খাতে কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্র জানিয়েছে, মোট কৃষিঋণের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে, ১৩ শতাংশ মৎস্য খাতে এবং ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করে দেয়া হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এমন বাস্তবতায় কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে প্রতি বছর কৃষি ও পল্লিঋণ নামে নীতিমালা প্রণয়ন করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতিমালার আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নও তদারকি করা হয়। প্রথা অনুযায়ী এবারও কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণের নীতিমালা শিগগির জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করলে কৃষকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সুদে ঋণ পান। আবার ঋণের গুণগত মান বজায় রাখাও সম্ভব হয়। এই বিবেচনায় কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। আর চলতি অর্থবছরের নীতিমালায়ও সেটি গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্রে জানা গেছে, এনজিও-নির্ভরতা কমাতে বেসরকারি ব্যাংকের নিজস্ব শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। নিজস্ব নেটওয়ার্কে ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণে চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘অ্যাগ্রি ক্রেডিট সুপারভাইজার’ পদের এসব কর্মী দিয়ে ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ ছাড়া অন্য কোনো সেবা দিতে পারবে না। গত ২৩ জুন এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।