বিদায় নিলেন গভর্নর ফজলে কবির

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায় নিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো গভর্নরকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে দেখা গেল। গতকাল আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১তম গভর্নরকে বিদায় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল, ঢাকা।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনার গভর্নরের পদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ড. আতিউর রহমান। তারও আগে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও ফরাসউদ্দিন আহমেদও সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে পারেননি। আজ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা আব্দুর রউফ তালুকদারের।

অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব মাহমুদা শারমীন বেণু। বিশেষ অতিথি ছিলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাসের ও মো. মাসুদ বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের আহ্বায়ক এইচ এম দেলোয়ার হোসাইন।

বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এক মেয়াদি চ্যালেঞ্জ রেখে আমি বিদায় নিচ্ছি। করোনার সময় যে চ্যালেঞ্জ ছিল তার একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ ছিল। সবাই ধারণা করেছিল টিকা কার্যক্রম শেষ হলে চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জ তার কোনো সীমা নেই। আমি আশা করি আমার যোগ্য উত্তরসূরি যিনি গভর্নর হিসেবে আসছেন তিনি মূল্যস্ফীতি ও ডলার রেটের এ চ্যালেঞ্জ শক্তহাতে মোকাবিলা করবেন।

বিদায়ী বক্তব্যে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গভর্নর। তিনি বলেন, ছয় বছর তিন মাস পার হয়ে গেল। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন হঠাৎ করে অর্থমন্ত্রী বললেন, সো ইউ আর দ্য গভর্নর। আমি বললাম, গভর্নর! তিনি বললেন, হ্যাঁ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। আমি গভর্নর হওয়ার পর যখন দেশে ফিরছিলাম, তখন বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেন, আপনার প্রথম কাজ কী হবে? আমি বলেছিলাম, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইমেজ পুনরুদ্ধার করা। কর্মকর্তাদের মনোবল চাঙা করা।

পরবর্তী গভর্নরের উদ্দেশে তিনি বলেন, গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যা-ই বলুক না কেন আপনারা বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে চলছে সেভাবেই চালাবেন। আমাদের ঘোষিত মুদ্রানীতির বিষয়ে অনেকে মন্তব্য করছেন। কিন্তু আমি মনে করি এটি ঠিক আছে। আপনারা এভাবেই চলবেন।

বিদায় মুহূর্তে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পারফরম্যান্স অসাধারণ। অন্য কোনো দেশে এমনটা পাওয়া যায় না। এখানে অনেক মেধাবীর সমন্বয় আছে। দেশের অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমনটা দেখা যায় না, যা আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে পেয়েছি।

ফজলে কবির বলেন, এখানকার কর্মকর্তারা কাজ এনজয় করেন। সবাই সবাইকে উৎসাহ দেন। আমিও সবাইকে উৎসাহ ও স্বীকৃতি দিতাম। যার কাজ তাকে স্বীকৃতি দিতাম।

তিনি বলেন, আমাদের সবার প্রচেষ্টায় যে অর্জন তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্জন। সবাই যার যার দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বিদায়ী গভর্নর। নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত রয়েছে। আবেগতাড়িত হয়ে গভর্নর বলেন, আমি দেশের অর্থনীতির জন্য যা করতে পেরেছি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। আর তা হলো সম্মানযুক্ত ভালোবাসা। আমি সরকারের কাছ থেকেও অনেক সম্মান পেয়েছি। এর মধ্যে মুজিববর্ষে পদ্মা সেতুর স্মারক নোটে আমার স্বাক্ষর রয়েছে, এটি অনেক সম্মানের। শেখ মুহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, চাকরিজীবনে প্রশাসক হিসেবে গভর্নর ফজলে কবির যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তার সংমিশ্রণে তিনি দক্ষতার সঙ্গে আর্থিক খাতের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে আমি তার সঙ্গে কাজ করেছি। ব্যক্তি ও কর্মজীবনে তিনি সবার জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।