বিদেশগামী শ্রমিকদের সহজে ঋণপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করুন

দেশে কর্মসংস্থান সংকট প্রকট। জীবিকা নির্বাহের জন্য বিদেশ যেতে হয় বেকারদের। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ১৯৭৬ সালে জনশক্তি রফতানি শুরু হওয়া থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ২৬ লাখ ১৬ হাজার ২০৮ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন। প্রবাসে থাকাকালে যেমন কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেন, দেশে ফিরে জীবিকা নির্বাহের জন্য সাধ্যমতো কিছু করার চেষ্টা করেন। তারা আমাদের বোঝা নয়, সম্পদ।
প্রবাসী-আয় আমাদের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখলেও প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি আমরা তেমন দায়িত্বশীল নই। ধারদেনা করে, ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশ যান শ্রমিকরা। দেশে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ভোগান্তির শিকার হন, বিদেশেও নানাভাবে বঞ্চিত ও প্রতারিত হন তারা। বিদেশ যাওয়ার সময় নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে কয়েক বছর লেগে যায়। অথচ রাষ্ট্র কম সুদে ঋণ দিলে শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হতো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিপে উঠে এসেছে, দেশে কর্মরত ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র একটি ব্যাংক বিদেশগামীদের ঋণ দিচ্ছে মাত্র একটি ব্যাংক। গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণের সুদের পাশাপাশি ডকুমেন্টেশন ফি, স্ট্যাম্প ফি, সিআইবি রিপোর্ট ফি, লোন প্রসেসিং ফি, বিমা ফি, মূসক প্রভৃতি বাড়তি সেবা মাশুল দিতে হয়েছে অভিবাসী কর্মীদের। এতে ঋণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
খবরে আরও বলা হয়, কেবল প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক (পিকেবি) ও অগ্রণী ব্যাংক বিদেশ যাওয়ার ঋণ দিত। তবে বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংক এই ঋণ কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। ঋণ নিয়ে বিদেশ যাওয়া কর্মীদের ২৭ শতাংশ সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে তারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পাওয়া, কম মজুরির কাজ, এনজিও বা মহাজনী সুদ পরিশোধের চাপে অনেকে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন। আবার বিদেশ যেতে অতিরিক্ত ব্যয় হয় শ্রমিকদের।
যে শ্রমিকদের আয়ে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলে, তাদের দুর্ভোগে নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব না, কষ্টে-সৃষ্টে বিদেশ গেলেও বিড়ম্বনার শিকার হবে নিরীহ শ্রমিকরা; এটি কাম্য নয়। ব্যাংকগুলো যেন বিদেশগামী শ্রমিকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। জনশক্তি রফতানিকারকদের অসাধুতায় বিদেশ যাওয়ার খরচ বাড়ে। তাদের নিবৃত্ত করতে হবে। আয় করতে না পারলে ঋণ পরিশোধ করবে কীভাবে! বিদেশে কর্মীরা যাতে যথাসময়ে ন্যায্য বেতনে চাকরি পান, সে বিষয়ে দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।