বিদেশিদের পালাতে সহায়তা করায় দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোতে র‌্যাবের অভিযানের পর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশিদের ‘পালাতে সহায়তা করায়’ দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সেগুনবাগিচার একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ ওঠে। তাদের একজন রমনা থানার কনস্টেবল দীপঙ্কর চাকমা বলে ভিডিও দেখে অনেকে শনাক্ত করেছিলেন। আরেকজন ডিএমপির প্ররক্ষা বিভাগের এএসআই গোলাম হোসেন মিঠু।
ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার শফিকুল।
উল্লেখ্য, র‌্যাব গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে অভিযানের সময় ক্যাসিনো থাকার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। যুবলীগের বিভিন্ন নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন এসব ক্যাসিনো পরিচালনায় বিদেশিরা কাজ করতেন বলেও খবর বের হয়। ওই রাতেই সেগুনবাগিচার ভবন সামিট হাসান লজের সিসি ক্যামেরায় একটি ভিডিওচিত্র আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যে ভবনে বেশ কয়েকজন নেপালি থাকতেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, নেপালিরা ওই বাড়ি ছাড়ার আগে সেখানে ঢোকেন কয়েকজন, তাদের একজনের হাতে ওয়াকিটকি ছিল। ওয়াকিটকি হাতে ওই ব্যক্তি সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য বলে গণমাধ্যমে খবর এলেও তা নাকচ করেছিলেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তিনি মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘তারা যে পুলিশ সদস্য, এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ তার দুদিন পরই দুজনের পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে দুই পুলিশ সদস্যের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়েছে।’
দীপঙ্কর চাকমা গত ২৫ আগস্ট ছুটিতে যাওয়ার পর ৩ সেপ্টেম্বর যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু তার পরও যোগদান না করায় ১৭ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় একটি জিডি করে থানা কর্তৃপক্ষ।
১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান চালানোর সময় অবৈধ ক্যাসিনোগুলোতে নেপাল ও চীনের কয়েকজন নাগরিককেও পেয়েছিল র‌্যাব। তবে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। র‌্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তাদের (বিদেশি) ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছে কি না, সেটা আমরা দেখছি। যদি অবৈধ হয়, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অবৈধ ক্যাসিনোগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোচরেই পরিচালিত হতো বলে অভিযোগ উঠেছে, যদিও পুলিশ কর্মকর্তারা সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল বলেন, ‘এই দুই পুলিশ সদস্য ছাড়াও ক্যাসিনোর সঙ্গে আর কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’