উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য ঋণ গ্রহণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পৃথিবীর সব দেশই ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। দেশি ঋণ ও বিদেশি ঋণ। বাংলাদেশে দেশি ঋণের তুলনায় বিদেশি ঋণ অপেক্ষাকৃত স্বস্তা। কিন্তু বিদেশি ঋণ ও এর সুদ পরিশোধ করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে দেশের জন্য দুর্দশা নেমে আসতে পারে। বিশ্বে ঋণ নিয়ে সমস্যায় পড়ার ঘটনা বিরল নয়। এক দশক আগে ইউরোপের দেশ গ্রিস মহাসংকটে পড়েছিল। তাদের বাজেটের ৭০ শতাংশেরও বেশি অর্থ চলে যেত ঋণ পরিশোধে। আগ্রাসী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে অবিবেচনাপ্রসূত ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসর দেশ শ্রীলংকাও। এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও ঋণ গ্রহণে চৌকস না হলে বাংলাদেশের জন্যও তেমন শোচনীয় পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। কাজেই বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দেয়া আবশ্যক।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘২০০৬ থেকে ২০২২ সাল: ১৬ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪০৯ শতাংশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০০৬ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১৬ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪০৯ শতাংশ বা চার গুণের বেশি। ঋণের এ বৃদ্ধি অস্বাভাবিক না হলেও তা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ দশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়লে তা সামাল দেয়া কঠিন হবে। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের অনেক স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ ডেফার্ড করা হয়েছে ডলার সংকটের কারণে। রিজার্ভ দুর্বল হওয়াসহ নানা কারণে আন্তর্জাতিক রেটিং প্রতিষ্ঠান মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান নি¤œগামী করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ যদি বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তা ভয়ংকর বার্তা দেবে।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। যখন দেশের ৮০ শতাংশের ওপরে জনসংখ্যা দরিদ্র ছিল, তখনও বাংলাদেশ সফলভাবে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ পরিশোধ নিয়ে নানা জটিলতার সূচনা হয়েছে। বিশেষ করে দেশের বেসরকারি খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েছে। আর দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের আকারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ১০ বছর আগে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভ শক্তিশালী করা অত্যাবশ্যক। এর পাশাপাশি নতুন নতুন বৈদেশিক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। অন্যথায় গ্রিস বা শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বৈকি। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সজাগ থাকবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।