Print Date & Time : 28 August 2025 Thursday 5:44 pm

বিদেশি এয়ারওয়েজে চাকরির প্রলোভনে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার টার্গেট

নিজস্ব প্রতিবেদক  : রাজধানীর ভাটারায় ‘সুসিং টাওয়ার’ ভবনে অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড (এএনএ) নামের বিদেশি বিমান সংস্থার জাঁকজমকপূর্ণ অফিস। এই ঠিকানা ব্যবহার করে পত্রিকায় এএনএ নামের বিমান সংস্থার এয়ার হোস্টেসসহ বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পাতে একটি চক্র।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে অন্তত ২০০ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে বাছাই করে ১৭০ জনকে চাকরির ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়। ইন্টারভিউতে বসার ক্ষেত্রে অগ্রিম দিতে হয় এক থেকে দুই লাখ টাকা। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে আরও পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

মাত্র এক মাসে প্রায় অর্ধশত চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন চক্রের মূলহোতা ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা এমএ হক আলম ফরহাদী (৬০), মেহেরাব হোসেন (২১), মো. রাসেল হোসাইন (৩০) ও শাহাদাত হোসেন (৩৫)।

এ সময় চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া নগদ এক লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, প্রতারণায় ব্যবহƒত ল্যাপটপ, মনিটর, বিপুল পরিমাণ চাকরির আবেদনপত্রসহ মালামাল উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।

তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটি মাত্র এক মাসে চটকদার বিজ্ঞাপনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে শুধু ইন্টারভিউর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের টার্গেট ছিল আগামী ছয় মাস চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ইন্টারভিউ ও প্রশিক্ষণের নামে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। পাশাপাশি ভাটারায় ড্রাগমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলে টাকা আদায়ের চুক্তি করে। এর মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল চক্রটি।

র‌্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, প্রতারক চক্রের মূলহোতা আলম ফরহাদী সামান্য পড়াশোনা করে ফেনীতে নিজ এলাকায় হোমিওপেথি ওষুধ বিক্রি করতেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় এসে অল্প সময়ে বেশি টাকা আয় করতে বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রতারণা করতে গিয়ে নিজেকে বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন।

এমনকি ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে তার তিন সন্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি তিনি এএনএ নামের জাপানি এয়ারওয়েজ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারেন। পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে ফাঁদ পাতেন। মাত্র এক মাসে তার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক চাকরি প্রার্থী। হাতিয়েছেন কোটি টাকা।

অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দীন আরও বলেন, গ্রেপ্তার আলম ফরহাদী র‌্যাবের কাছেও ১৮-১৯ বছর ধরে দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন বলে পরিচয় দেন। যদিও যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যায়, তিনি সরকারি কোনো পদেই নেই। ফরহাদীর বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-১০-এর অধিনায়ক জানান, গ্রেপ্তার মেহেরাব হোসেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চাকরির খোঁজ করতে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে মোটা অঙ্কের টাকা বেতনের প্রলোভনে তিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যান। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন মেহেরাব।

গ্রেপ্তার শাহাদাত হোসেন পড়ালেখা শেষ করে বেকার ছিলেন। এর আগে কয়েক মাস একটি এয়ার টিকিটিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। সহকর্মীর মাধ্যমে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয় হলে চক্রে যোগ দিয়ে রিজার্ভেশন অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

পড়াশোনা শেষে চাকরি খুঁজতে গিয়ে ফরহাদীর সঙ্গে গ্রেপ্তার রাসেল হোসাইনের পরিচয় হয়। পরবর্তী সময় ফরহাদীর নতুন অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাব-১০-এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দীন।