শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিদেশি কর্মীদের জন্য ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গাপুর। নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেয়া (ইপি) ও আধা দক্ষ কর্মীদের (এস পাস) নিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের উদ্দেশে দেশটির অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওং গত শুক্রবার বাজেট পেশ করার সময় এ কথা বলেন। এ ঘোষণা প্রতিষ্ঠানগুলো শঙ্কা প্রকাশ না করলেও নিয়োগদাতারা যে কর্মী নিয়োগে চ্যালেঞ্জে পড়বেন তা ধারণা করা হচ্ছে।
অ্যাডেমকো সিকিউরিটি গ্রুপের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর টবি কো বলেন, সরকারের এ ঘোষণায় আমরা ‘সম্পূর্ণ বিস্মিত’ হয়নি। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিদেশি কর্মী নিয়োগে সরকার যে বিধিনিষেদের পথে হাঁটছে তার বহিঃপ্রকাশ এই ঘোষণা বলে মনে করেন তিনি। শুধু ন্যূনতম বেতন বাড়ানো নয়, বিদেশি কর্মী নিয়োগের নিয়মেও কড়াকড়ি আনতে চলেছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে কর্মী ঘাটতিতে থাকা দেশটির নির্মাণ খাত আরও বড় সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে টবি মনে করেন, এ ঘোষণায় প্রতিষ্ঠান মালিকদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। কেননা এর ফলে তাদের মানবসম্পদ কৌশলে বেশি পার্থক্য দেখা দেবে না। বরং দেশটির সংস্কৃতিতে আর বেশি বিদেশি নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তি হবে।
মূলত স্থানীয়দের চাকরির সুযোগ বাড়ানো ও বিদেশি দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুরের সরকার। অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওং বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখার মতো পেশাদার ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের আকৃষ্ট করতে এই নতুন নীতি নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশি কর্মীদের জন্য সিঙ্গাপুর তার দরজা খোলা রাখবে। গোটা বিশ্ব থেকে প্রতিভাবানদের স্বাগত জানাবে। শ্রমশক্তির উচ্চতর পর্যায়ে দক্ষতার যে ঘাটতি রয়েছে, তা মেটাতে আমরা উপযুক্ত পেশাদারদের নিয়োগ দিতে পারব।
কভিড-১৯ মহামারিতে সিঙ্গাপুরে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বেশ কমে গেছে। কঠোর লকডাউন ও ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিদেশি-বিরোধী মনোভাবের প্রভাবে অনেকে কাজ হারিয়েছেন।
নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি কর্মীদের (ইপি) ন্যূনতম মাসিক বেতন সাড়ে চার হাজার সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার করা হবে। আর্থিক খাতের কর্মীদের বেতন ১০ শতাংশ বেড়ে হবে সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার (আগে ছিল পাঁচ হাজার ডলার)। আধাদক্ষ নতুন কর্মীদের ন্যূনতম বেতন হবে আড়াই হাজার ডলার থেকে তিন হাজার ডলার। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মীদের বেতন বেড়ে হবে সাড়ে তিন হাজার ডলার। আধাদক্ষ কর্মীদের বেতন আগামী বছর আবার বাড়ানো হবে। পরে ২০২৫ সালে আরও একবার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
টবি কোর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ জন আধাদক্ষ কর্মী কর্মরত। তার প্রতিষ্ঠানে ১৮০ জন কর্মী রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ প্রকৌশলী। তিনি বলেন, আমি আমার প্রতিষ্ঠানে আরও দেশি কর্মী নিয়োগ দেব। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে শ্রমিক পাওয়া কষ্টকর। সিঙ্গাপুরে স্থানীয়দের চাকরির সুযোগ বাড়ানোর দাবিতে বিদেশি কর্মীনির্ভরতা কমানোর দাবি উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে দ্বিতীয়বার ন্যূনতম বেতন বাড়াচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের বিজনেস প্রফেসর লরেন্স লোহ বলেন, বিদেশি প্রতিভা অন্বেষণের জন্য বেতন বাড়ানো ভালো উদ্যোগ। তবে স্থানীয় কর্মীদের নিয়োগদানে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। স্থানীয় কর্মী বিশেষ করে নতুন গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগে প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইয়ি সার্ন ওয়েইয়ের মতে, বিদেশি কর্মীদের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা অযৌক্তিক। তার প্রতিষ্ঠানে ২০০ কর্মীর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জন বিদেশি কর্মী। আমি মনে করি, নতুন ঘোষণার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিদেশি কর্মী আহরণ কমে আসবে। তবে স্থানীয় শ্রমিকদের কাজ করতে চাইবে না। এতে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে আমাদের শ্রমবাজার।