প্রবাসী শ্রমজীবীদের কষ্টার্জিত অর্থ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করলেও তাদের প্রতি আমরা তেমন দায়িত্বশীল নই। ধারদেনা আর ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যান তারা। দেশে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দ্বারা ভোগান্তির শিকার হন, বিদেশেও নানাভাবে বঞ্চিত ও প্রতারিত হন তারা। জাল ভিসার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ইউরোপের দেশগুলোয় পাঠানোর অভিযোগে বিমানবন্দরে প্রায়ই আটক হয় প্রতারকরা।
অনেক দিন ধরেই বিমানবন্দরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংস্থার নিম্নপদস্থ কর্মচারী ও বেসরকারি এয়ারলাইনসের লোকজন একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। তারা জাল ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মানব পাচার করতেন। এ জন্য তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিতেন। কিছু দিন আগে যুক্তরাজ্যে একটি প্রতারক চক্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজের ভিসার জন্য ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে লাখ লাখ পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে ‘জাল নথি: ইতালিতে বাংলাদেশিদের সব কাজের অনুমোদন স্থগিত’ শীর্ষক প্রতিবেদন। খবরে জানা যায়, বিপুলসংখ্যক জাল নথির কারণে ইতালি গত ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের অনুকূলে ইস্যু করা ‘নুলা ওস্তা’ বা কাজের অনুমোদন স্থগিত করেছে। এসব নুলা ওস্তা পূর্ণাঙ্গ যাচাই করা হবে। যাদের নথি বৈধ পাওয়া যাবে, পরবর্তী সময়ে এর অনুকূলে তাদের দেয়া হবে ভিসা। বৃহস্পতিবার ঢাকার ইতালি দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনেক বেশি পরিমাণে জাল কাগজপত্র জমা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরে যাদের কাগজ বৈধ পাওয়া যাবে, তাদের ভিসা দেয়ার উদ্দেশ্যে আবারও চাওয়া হবে পাসপোর্ট। দূতাবাস প্রত্যেক আবেদনকারীকে ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে এসএমএস বা ই-মেইলে জানিয়ে দেবে, তিনি কখন পাসপোর্ট ফেরত নিতে পারবেন। কাজের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাশী যাদের নুলা ওস্তা নিশ্চিতকরণ সম্পন্ন হবে, তাদের ভিসা আবেদন জমা দেয়ার জন্য ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হবে।
আমাদের বৈদেশিক আয়ের বড় উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয়। দক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিক পাঠায় জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ ভুয়া ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট দেখিয়ে বিদেশগামীদের প্রলুব্ধ করে। বিদেশে নানাভাবে প্রতারিত হন নিরীহ শ্রমিকরা। দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার হন তারা। দেশের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোও আমাদের দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর দায়িত্ব। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তারা জমিজমা বিক্রি কিংবা ধারদেনা করে বিদেশে পাড়ি জমান।
অবৈধ বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বৈধরাও নানা ধরনের সংকটে রয়েছেন। প্রতারিত শ্রমিকদের রক্ষায় সরকার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যশা।