Print Date & Time : 7 September 2025 Sunday 10:27 am

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাতিল করা হোক

‘প্রস্তাব নেই, তবু গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, সেটি পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুনাফায় থাকায় এবার গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো। অথচ বুধবার গণশুনানিতে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রাহক পর্যায়ে না বাড়ালে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর সম্ভব নয়। চলতি অর্থবছর রেকর্ড পরিমাণ লোকসান দিতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এজন্য বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তাই লোকসান তথা ভর্তুকির বোঝা কমাতে পাইকারি (বাল্ক) বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পিডিবি।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। সব বিবেচনায় নিয়ে সবার জন্য সহনশীল সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। উল্লেখ্য, গত ১২ বছরে কয়েক দফায় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৯০ শতাংশ বেড়েছে। এখন  বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব না থাকলেও গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাশিত নয়।

পিডিবি উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান করবে তার মাশুল দেবে সাধারণ গ্রাহক, এটি দুঃখজনক। অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, সিস্টেম লস প্রভৃতি ঠেকানো গেলে লোকসান এমনিতেই কমবে। সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করার পর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে দাম বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু নিজেরা কোনো দায় না নিয়ে সব গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।   

লোকসানের বোঝা কমাতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো দরকার, কী সহজ হিসাব। যেন গ্রাহকরাই যত সমস্যার মূল। কেন বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বিপুলভাবে বাড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রাখা ও ভাড়া দেয়া হয়। এখানে গ্রাহকের দায় কী? অপচয় কিংবা চুরিতে জড়িত থাকলে বা অনাদায়ী বিল আদায়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নেয়া যেতেই পারে। সরকারের সংস্থা পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে উৎপাদন না করলেও ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হয়। গত এক দশকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়ায়।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব প্রতিনিধি শুনানিতে বলেছেন, বিদেশ থেকে কয়লা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৬০ পয়সায়। আর দেশে কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ পড়ছে ৮ টাকা ৭১ পয়সা। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় ব্যয় বাড়ছে।

বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার, সেবার মান, জ্বালানি পরিচালনা, আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অনুসরণ করলে গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্পমালিকরা তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। আমরা আশা করি, সরকার বিভিন্ন জ্বালানির ওপর আরোপিত শুল্ক-কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি বিদ্যুতের ওপর আগাম কর আরোপ বাতিল করবে। এতে ভর্তুকি না দিয়েও খরচ কমানোর মাধ্যমে পিডিবির লোকসান কমানো যাবে।