Print Date & Time : 5 September 2025 Friday 11:03 pm

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিজনিত জনদুর্ভোগ আমলে নিন

বিদ্যুতের দাম পাইকারিতে আট শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির প্রস্তাব অনুমোদিত হলে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ছয় টাকা ২০ পয়সা টাকা থেকে বেড়ে হবে ছয় টাকা ৭০ পয়সা এবং গ্রাহক পর্যায়ে সাত টাকা ৪৯ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে সাত টাকা ৮৬ পয়সা। পিডিবি চায় ফেব্রুয়ারি থেকেই বর্ধিত দাম কার্যকর হোক। এখন সরকারের নির্বাহী আদেশেই দাম বাড়ানো যায়। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি দাম বাড়বে, তা সাধারণ মানুষের ধারণায়ও ছিল না।

আগে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়াতে সরকারকে অপেক্ষায় থাকতে হতো। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন সংশোধন করে নিজের কাছে এ ক্ষমতা নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম দ্রুত বাড়াতেই এটি করা হয়েছে বলে মনে করছেন জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা। গত ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির  ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি হয়। ওই দিনই এ-সংক্রান্ত গেজেটও প্রকাশ করা হয়। সংশোধিত গেজেটের ভাষ্য, এ আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ে জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির (জ্বালানি) নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তাপর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু দাম বাড়াতে হলে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকারকে যেতে হয়। আইন সংশোধন করায় দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়। অবশ্য এমন অভিমতও রয়েছে, বিইআরসির ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এটি করা হয়েছে। গত আগস্টে এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এটা সম্ভব হয়েছে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে দাম বাড়ানোয়। অন্যদিকে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে বিইআরসিতে আসার পর গ্যাসের দাম গত জুনে বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ৬৬ শতাংশ দাম বাড়াতে এসে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। বিইআরসিতে দাম বাড়াতে এলে জ্বালানি খাতের অনিয়ম-অদক্ষতার বিষয়ও সামনে চলে আসে। কিন্তু প্রজ্ঞাপন দিয়ে দাম বাড়ানো হলে জবাবদিহির বিষয় থাকে না।

অনিয়ম-অদক্ষতার সামনে আসবে, কিংবা জবাবদিহি করতে হবে নাÑএমন ভাবনা থেকে সেবামূল্যের দাম বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। যে যার মতো করে দাম বাড়ানোর ছুঁতো খুঁজবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পিডিবির ব্যয় অনেক বেড়েছে। কিন্তু এর দায় পুরোটা সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন উঠবেই। দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানি নেই, তাই বলে নির্বিচারে দাম বাড়ানো উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি।