বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি যেন অস্বাভাবিক হারে না বাড়ে

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বাল্ক মূল্য ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়েও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে আনুপাতিক হারে বিদ্যুতের দাম আরও বৃদ্ধির প্রস্তাবও রয়েছে।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির ফলে চলতি বছর পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ইউনিটপ্রতি নির্ধারণ করতে হবে আট টাকা ৫৮ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ইউনিটপ্রতি সাড়ে তিন টাকা বা ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। আর বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে।

দেশে গত ১১ বছরে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না আমরা সে কথা বলি না। তবে এত অপচয়-অব্যবস্থাপনার পর বিদ্যুতের কতটা মূল্য বৃদ্ধি যৌক্তিক, সেটিই প্রশ্ন। নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতির দায় ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে না।

উৎপাদন মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ঘাটতি থাকলেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে, তা যুক্তিসঙ্গত নয়। পদ্ধতিগত ক্ষতি (সিস্টেম লস) এড়ানো গেলে বিদ্যুতের দাম হয়তো না বাড়ালেও চলে। কিন্তু উৎপাদন ও বিতরণকারীর সংস্থার সেদিকে আগ্রহ কম। নইলে উৎপাদন খরচ কমানোর বদলে বেশি খরচের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায় বারবার দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে কেন।

পিডিবির বক্তব্য অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহের খরচ বৃদ্ধির অন্যতম হলো আইপিপি বা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনা। ঘাটতি কমানোর জন্য বেসরকারি খাতের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ওই তহবিল পিডিবিকে সংস্থান করে দিলে সমস্যা এত গভীর হয় না। সরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য পিডিবিকে দেয়ার মতো অর্থ না থাকলেও ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়।

তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদনক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সরকারি খাতকে দুর্বল করে রেখে ক্রমেই বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সংস্কার, দক্ষতা বৃদ্ধি, সিস্টেম লস বন্ধ প্রভৃতিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার পরও ঘাটতি থাকলে দাম বাড়ানো যেতে পারে। একথা স্বীকার করতেই হবে, বেসরকারি খাত বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার অর্থ হলো জনগণের অর্থ বেসরকারি খাতে ব্যয়। ভর্তুকি কিংবা দাম বৃদ্ধি, দুটোই জনগণের অর্থ। এভাবে অর্থ অপচয়, অপব্যবহার কিংবা লোপাট কাম্য নয়। ঘাটতি কমানোর অন্য পন্থাগুলো অনুসরণের পর সর্বশেষ পন্থা হিসেবে বিদ্যুতের দাম যদি বাড়াতেই হয়, সেটি যেন অস্বাভাবিক হারে না বাড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।