বিদ্যুতে সরকারের প্রচ্ছন্ন দায় কমাতে ব্যবস্থা নিন

সরকার বিভিন্ন সময়ে সরকারি নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত ঋণের জন্য গ্যারান্টি ও কাউন্টার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এসব ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে তা পরিশোধের দায় সরকারের। তাই সরকারের ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থার ওপর এর প্রভাব রয়েছে। তবে সভরেন গ্যারান্টিজনিত আর্থিক ঝুঁকি কমাতে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করতে চাইছে সরকার। গ্যারান্টি ইস্যুর মাধ্যমে সরকারের যে প্রচ্ছন্ন দায় সৃষ্টি হয়, তা ধারণযোগ্য রাখতে ও সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতার এবং সরকারের আর্থিক ব্যবস্থপনায় দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্যারন্টি ইস্যুর নির্দেশিকা রয়েছে। ওই গাইডলাইন অনুসরণ করলে অর্থাৎ ঋণ চুক্তির গ্যারন্টিভুক্ত সংস্থা, বিভাগ ও মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীল হলে দায় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু গতকাল শেয়ার বিজ কড়চার প্রতিবেদন ‘সরকারের প্রচ্ছন্ন দায় বাড়াচ্ছে বিদ্যুৎ খাত: সভরেন গ্যারান্টি ৯৮ হাজার কোটি টাকা, বিদ্যুতেই ৫১ হাজার কোটি’ বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার বড় উপাদান হিসেবেই গণ্য হবে সাধারণ মানুষের কাছে।

গত ১৪ বছরে সরকারি-বেসরকারি খাতে একশর বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধাীন বিভিন্ন কেন্দ্রের জন্য নেয়া হয়েছে কঠিন শর্তের ঋণ। আর এসব ঋণের জন্যও সরকার দিয়েছে সভরেন গ্যারান্টি। বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা সরকারের মোট সভরেন গ্যারান্টির ৫২ শতাংশের বেশি।

গাইডলাইন অনুসারে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় তিন মাস পরপর অধীন সুবিধাভোগী সংস্থার ইস্যুকৃত সব রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি ও কাউন্টার গ্যারান্টির পর্যালোচনা করবে। এই পর্যালোচনার মাধ্যমে গ্যারান্টির বিপরীতে গৃহীত ঋণের কিস্তি শর্তানুযায়ী সঠিক সময়ে পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং গ্যারান্টির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ প্রতি তিন মাস অন্তর বেনিফিশিয়ারি, ঋণদাতা ও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করবে।

দেশে  বেশ কয়েকটি সংস্থা ঋণ বিতরণের জন্য সভরেন গ্যারান্টি নিয়েছে। যেমনÑঋণ বিতরণের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক, পণ্য আমদানির জন্য টিসিবি, কৃষির উন্নয়নে বিএডিসি, আনসার ভিডিপি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প প্রভৃতি। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের মতো কোথাও দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। 

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পিডিবিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ  পরিশাধ করতে হয়। উচিত ছিল বিদ্যুতের চাহিদা ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা, অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্রমেই বন্ধ করা এবং মাস্টারপ্ল্যান জরুরিভাবে পর্যালোচনা করা। কেন অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে? বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাষ্ট্রের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ও হতাশাজনক। সরকারের প্রচ্ছন্ন দায় বাড়াবে আর মন্ত্রণালয় তা কমাতে ব্যবস্থা নেবে না, এটি জনস্বার্থ পরিপন্থি। শেষ পর্যন্ত দায় তো সাধারণ মানুষকেই নিতে হয়। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।