বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতি চায় বারভিডা  

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জ্বালানি-সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক গাড়ির। ২০৩০ সাল নাগাদ মোটরযানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও ইলেকট্রিক গাড়ির (ইভি) গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোটার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। সেজন্য আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতির প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।

সংগঠনটি বলছে, বিভিন্ন দেশ জ্বালানি-সাশ্রয়ী ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে। ভারতে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ওপর জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে এনেছে। এমনটি গাড়ির চার্জার বা চার্জিং স্টেশনের জন্য জিএসটি ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় স্ট্যাম্প শুল্কসহ অন্যান্য করাদির ক্ষেত্রেও ৫০ শতাংশরও বেশ শুল্ক রেয়াত দেয়া হয়। এদিকে নিউজিল্যান্ডে বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য নগদ ভর্তুকি দিচ্ছে। নতুন যানবাহনের জন্য ৮ হাজার ৬২৫ এবং ব্যবহƒত গাড়িগুলোর জন্য ৩ হাজার ৪৫০ ডলার পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এমনকি পাকিস্তানেও স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান গ্রিন ব্যাংকিংয়ের আওতায় ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার জন্য কম সুদে অর্থ সহায়তা দেয়। যুক্তরাজ্য রোড ট্যাক্সের ওপর ছাড় দেয় এবং গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের নতুন ইভিতে ৭ হাজার ডলার পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে।

অন্যদিকে, নেদারল্যান্ডসে বৈদ্যুতিক গাড়িকে মোটরগাড়ির এবং ব্যক্তিগত যানবাহন কর থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে। চীনে বহুদিন থেকেই পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক যান কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নগদ ভর্তুকিসহ নানামুখী প্রণোদনা দিয়ে আসছে। সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী সবধরনের বৈদ্যুতিক যানবাহন  কেনা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ায়ও আমদানি ও আবগারি শুল্কের পাশাপাশি বিক্রয় কর সম্পূর্ণ ছাড় দিয়েছে। সিঙ্গাপুরে ইলেকট্রিক গাড়ি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ৪৫ শতাংশ মওকুফ। ট্যাক্সি ক্যাবের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ৪৫ হাজার ডলার ছাড় দেয়া হয়েছে। ৯৩-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইলেকট্রিক যানবাহনের ক্ষেত্রে রোড ট্যাক্স ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে।

বারভিডার গবেষণার তথ্যমতে, যান্ত্রিক পরিবহনের দূষণ থেকে সবুজ প্রকৃতির নির্মলতাকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জালানি (ফসিল ফুয়েল) বিহীন মোটরযানের উৎপাদন, প্রযুক্তি ও ব্যবহার নিয়ে গবেষণা দুই দশক আগ থেকেই জোরালো হয়ে উঠেছে।

সড়ক মহাসড়কে সূর্যের আলো ঢেকে দেয় যে কালো ধোঁয়া, যেখান থেকে ব্ল্যাক কার্বনের ন্যায় বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান নির্গত হয়ে বাতাসে দীর্ঘ সময় জুড়ে প্রবহমান থাকে এবং এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী বাংলাদেশে এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১০-২০ মাইক্রোগ্রাম, অথচ ইউরোপ আমেরিকাসহ পরিবেশ সুরক্ষায় সক্রিয় রাষ্ট্রগুলোয় এর পরিমাণ শূন্য দশমিক এক থেকে শূন্য দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম, অর্থাৎ বাংলাদেশের বায়ুতে সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক কালো কার্বনের উপস্থিতি ১০০ থেকে ১২০ গুণ বেশি।

বারভিডা জানায়, জীবাশ্ম জালানির চেয়ে ইভিতে কমপক্ষে চারগুণ বেশি জালানি সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পরিবহন খাতে জ্বালানি তেল ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলে অতি দরকারি বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে তেল আমদানি যেমন কমবে তেমনি সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুরো আমদানি খাতকে নির্ভর করে তুলবে। যেমনÑটয়োটা বিজেডফোরএক্স ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ৭২ দশমিক ৮ কিলোওয়াট। পূর্ণ চার্জ থেকে সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। এ চার্জ দিয়ে চলা যাবে ৫১০ কিলোমিটার পথ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত শুল্ককর হার রয়েছে ৪৫ শতাংশ। যেটি কমিয়ে ৩০ শতাংশে আনতে প্রস্তাব করেছে বারভিডা। অন্যদিকে সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ সিসি থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত (মাইক্রোবাস ছাড়া) ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ককর হার রয়েছে। যেটি কমিয়ে ৬০ শতাংশে আনতে প্রস্তাব করা হয়েছে। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি থেকে ৩০০ সিসি পর্যন্ত ২৫০ শতাংশ শুল্ককর হার নির্ধারণ করা আছে। যেটি কমিয়ে ১৫০ শতাংশ আনতে প্রস্তাব করা হয়েছে।

৩০০১ সিসির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি থেকে ৪ হাজার সিসি পর্যন্ত ৫০০ শতাংশ শুল্ককর হার রয়েছে। যেটি কমিয়ে ২৫০ শতাংশে আনতে প্রস্তাব করেছে বারভিডা। ১ হাজার ৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে শুল্ককর হার ২০ শতাংশ রয়েছে। যেটি ফ্রি করতে বলা হয়েছে। ১ হাজার ৮০১ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে শুল্ককর হার রয়েছে ৪৫ শতাংশ। যেটি কমিয়ে ৩০ শতাংশে আনতে প্রস্তাব করা হয়েছে।

বারভিডার এসব প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছে, উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারীদের দেশের দূর-দূরান্তে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানায় নিরাপদে যাতায়াতের জন্য জিপ গাড়ির বিকল্প নেই। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার প্রক্রিয়ায় দেশের বিপুল সামর্থ্যবান ক্রেতাদের জন্য এসব গাড়ি বর্তমানে কোনো বিলাসদ্রব্য নয়। নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব গাড়ির চাহিদা বিশ্বব্যাপী ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই প্রস্তাবিত হারে সম্পূরক শুল্ক কমানো হলে তা শিল্পায়নে বিশেষ সহায়ক হবে।