Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 2:30 am

বিদ্যুৎবিল বাড়ানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা কোথায়

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নানা দিক পর্যালোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি  প্রতিনিধিদলের ঢাকায় গতকাল রোববার থেকে লাগাতার বৈঠক করার কথা। দুই সপ্তাহ ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক চলবে। মার্কিন ডলার অর্থাৎ মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায়, ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনা প্রভৃতি বিষয় এবারের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আইএমএফ যার সঙ্গে যে বিষয়ে কথা বলুক, তাতে ঋণ পাওয়াই প্রথম বিবেচনায় থাকবে। কিন্তু তা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় যেন প্রভাব না ফেলে। ভর্তুকি কমাতে আইএমএফ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছে। তাদের তো আমাদের দেশের বাস্তবতা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি বোঝার কথা নয়। আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা তাদের কতটা প্রভাবিত করতে পারবেন, সেটাই বিবেচ্য। তারা মনে করেন, আইএমএফের প্রস্তাব মেনে অন্য কোনো কিছু বিবেচনায় না নিয়ে ঢালাওভাবে  বিদ্যুৎবিল বাড়িয়ে দিলেই সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু বিদ্যুৎবিল না বাড়িয়েও যে সমাধানের চেষ্টা করা যায়, তারা তা ভাবতেই চান না।

যত দূর জানা গেছে, ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষ নেবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি। সবাই মানবেন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উপযুক্ত সময় এখন নয়। বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝানো গেলে আইএমএফ বুঝবে। কিন্তু আমাদের প্রতিনিধিরা কি সে পথে হাঁটবেন।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। সব বিবেচনায় নিয়ে সবার জন্য সহনশীল সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, সিস্টেম লস প্রভৃতি ঠেকানো গেলে লোকসান এমনিতেই কমবে। সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করার পর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে দাম বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু নিজেরা কোনো দায় না নিয়ে সব গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।   

লোকসানের বোঝা কমাতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো দরকার, কী সহজ হিসাব! যেন গ্রাহকরাই যত সমস্যার মূল! অপচয় কিংবা চুরিতে জড়িত থাকলে বা অনাদায়ী বিল আদায়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নেয়া যেতেই পারে। মনে রাখতে হবে, বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্পমালিকরা তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। আমরা আশা করি, সরকার  আগে বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা দূর করে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করে দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেবে। এরপর প্রয়োজন হলে বিল বাড়ানোর বিষয় বিবেচনা করবে। নিশ্চয়ই আইএমএফ এতে বাদ সাধবে না।