Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 9:30 pm

বিদ্যুৎ উৎপাদনে অস্বাভাবিক ব্যয় গ্রহণযোগ্য নয়

আধুনিক সভ্য যুগে বিদ্যুৎবিহীন একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। ফলে অনেক দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। অগ্রাধিকার দেয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রমকে এতটাই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে যে, এক্ষেত্রে দায়মুক্তি দিয়ে আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে, কিন্তু এ দায়মুক্তির সুযোগে অনেক অর্থের অপচয়ও হয়েছে বৈকি। ব্যক্তি খাতে গড়ে ওঠা বেশকিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ তুলে নেয়ার ঘটনা রয়েছে অসংখ্য। এতে করে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে কয়েকশ টাকা। এমন অস্বাভাবিক ব্যয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিদ্যুৎ খাতে এখন সুশাসন ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘২০২০-২১ অর্থবছর: এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় ৩৬৮ টাকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গত অর্থবছর নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রে বছরের বড় একটি সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক খরচ থেমে ছিল না। ফলে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, সেটুকুর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে অনেক। ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় গিয়ে ঠেকেছে ৩৬৮ টাকায়। কেবল এ কেন্দ্রটিই নয়, এমন আরও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় এমন অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ পিকিং পাওয়ার, রংপুর গ্যাস টারবাইন, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার (মধুমতি), প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জি ও বাংলা ট্র্যাক (ইউনিট-১)। এসব কেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১০০ থেকে দুই হাজার ২৫ টাকার মধ্যে। এ ধরনের অস্বাভাবিক উৎপাদন ব্যয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

একথা সত্য যে, দেশের বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০১০ সালের দিকে বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার ছিল। তখন প্রয়োজনের তাগিদে বাড়তি ব্যয়ের জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়েছে। তবে এখন স্বল্প খরচের বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। কাজেই বাড়তি জ্বালানি ব্যয়ের অদক্ষ কেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মনে করি।

জনগণের করের অর্থেই জনগণের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। কাজেই করের অর্থ কোন কোন ক্ষেত্রে কী পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে, স্বচ্ছতা ও সুশাসনের স্বার্থে জনগণের সম্মুখে তা প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করি। কাজেই বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর তৎপরতা নেয়া উচিত বলে মনে করি। সরকার এ ক্ষেত্রে অগ্রণী হয়ে উঠবে বলেই প্রত্যাশা।