বিশেষ প্রতিনিধি: অর্থনৈতিক মন্দা ও ডলার সংকটে গত অর্থবছর কৃচ্ছ্রসাধন নীতি গ্রহণ করে সরকার। জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয় এ সময়। ঘোষণা দিয়ে শুরু করা হয় লোডশেডিং। এর মধ্যে গত জুনে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ের রেকর্ড হয়। এতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সামান্য বেড়েছে। ফলে এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল করোনার পর সর্বনি¤œ।
সূত্রমতে, গত এক দশকের মধ্যে এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ নিন্মমুখী প্রবৃদ্ধির মাঝেও ২০২২-২৩ অর্থবছর ট্রান্সমিশন (সঞ্চালন) লস বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের পর গত অর্থবছরই এ হার ছিল সর্বোচ্চ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র চার দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দুই দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লস ছিল তিন দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছর এর চেয়ে বেশি সঞ্চালন লস হয়েছিল। সে বছর এ হার ছিল তিন দশমিক ১০ শতাংশ।
পিজিসিবির তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় (আমদানিসহ) আট হাজার ৩৯৭ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। এর আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল আট হাজার ৪৩ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৩৫৪ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বা চার দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল সাত হাজার ৫৮০ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছিল ৪৬৩ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ছয় দশমিক ১১ শতাংশ।
যদিও করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০১৯-২০ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ওই অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দুই দশমিক ৯৫ শতাংশ। এক দশকের মধ্যে এটি ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি। তবে পরের অর্থবছর অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ডাবল ডিজিট তথা ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। গত এক দশকের মধ্যে এর চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দুই বছর। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছর ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।
এর বাইরে ২০১৩-১৪ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি হয়। ওই দুই অর্থবছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ১৮ ও ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০১৪-১৫ অর্থবছর আট দশমিক ২০ শতাংশ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর আট দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে গত দুই অর্থবছর সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ দুই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পেয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির নি¤œমুখী ধারার পাশাপাশি সঞ্চালন লসও বেড়েছে গত অর্থবছর। এ সময় সঞ্চালন লস হয়েছে তিন দশমিক ০৭ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছর যা ছিল দুই দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর আগের (২০২০-২১) অর্থবছর সঞ্চালন লস ছিল তিন দশমিক ০৫ শতাংশ। এছাড়া করোনা সংক্রমণ শুরুর বছর ২০১৯-২০ অর্থবছর সঞ্চালন লস ছিল দুই দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছর দুই দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছর সঞ্চালন লস ছিল দুই দশমিক ৮২ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছর দুই দশমিক ৭৭ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছর দুই দশমিক ৮৬ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছর দুই ধমমিক ৬৭ শতাংশ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর দুই দশমিক ৬০ শতাংশ। এক দশকের মধ্যে ওই অর্থবছরই সর্বনি¤œ সঞ্চালন ছিল। পরবর্তী বছরগুলোয় তা ওঠানামা করে।
জানতে চাইলে পিজিসিবির কর্মকর্তারা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা গত দেড় দশকে কয়েকগুণ বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন সঞ্চালন লাইন গড়ে তোলা যায়নি। এতে মাঝে মধ্যে গ্রিড ফেইলের ঘটনা ঘটছে। গত অর্থবছর অক্টোবরে পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। ওই ঘটনায় প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে। এছাড়া ছোটখাটো বিপর্যয় প্রায়ই হয়েছে। এতে সঞ্চালন লস বেড়েছে।