বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বন্ধ হলো সার কারখানা

গরম বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। শহরাঞ্চলে সহনীয় হলেও গ্রামাঞ্চলে শোডশেডিং বেশি দেখা যাচ্ছে। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত তীব্র গরমের সময় বিদ্যুতের চাহিদা আরও বেশি থাকবে। কিন্তু জ্বালানি সংকট থাকায় সে চাহিদা পূরণে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সার উৎপাদন বন্ধ করেছে সরকার।

জানা যায়, সংকট থাকায় চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (সিইউএফএল) গত শুক্রবার সকালে হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ড্রিস্টিবিউশন লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এতে বন্ধ হয়ে যায় সিইউএফএলের সার উৎপাদন। তাতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পরিচালনাধীন এ কারখানার দৈনিক ৩ কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান কেজিডিসিএল থেকে ইউরিয়া উৎপাদনে সিইউএফএলে দৈনিক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করত। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক ইউরিয়া উৎপাদন ক্ষমতা ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ও ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে। তবে দেশীয় কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করলেও গ্যাস সরবরাহ সচল রেখেছে বিদেশি বিনিয়োগের কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো)।

সিইউএফএলের উৎপাদন বিভাগের প্রধান উত্তম চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস সংকটের কারণে আমরা উৎপাদনে যেতে পারিনি। ইতোমধ্যে বিসিআইসি থেকে কেজিডিসিএলসহ মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছে। তবে কোনো সুরাহা হয়নি। আমাদের উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলেছে। কবে নাগাদ কারখানা চালু করা যাবে সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি।

জানা যায়, তীব্র গরমের সময় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে বর্তমানে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সরকারের যে প্রস্তুতি, তাতে গরমে দৈনিক গড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকতে পারে।

এদিকে, কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গত শুক্রবার। এর ১৭ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। তার আগে ৮ এপ্রিল প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়েছিল। এতে দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হয়েছিল। তাই আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের কারণে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পিডিবি থেকে পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. নুরুজ্জমান এনডিসি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ করার জন্য আমরা কেজিডিসিএলকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কেজিডিসিএল সে পরিমাণ গ্যাস দিতে পারছে না। আমাদের যতটুকু চাহিদা সমপরিমাণ গ্যাস কাফকোর জন্যসহ বরাদ্দ করেছে। ফলে একটি প্রতিষ্ঠান চললে অন্য প্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব নয়। শুনেছি গ্যাস না পেলে কাফকো অপারেশন ক্লোজ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের বার্ষিক সারের চাহিদা রয়েছে ২৭ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে আমরা উৎপাদন করি ১৮ লাখ মেট্রিক টন। আর কাফকো উৎপাদন করে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। বাকি দুই মেট্রিক টন ঘাটতি থাকে। এগুলো আমদানি করতে হয়। এখন আগামী অক্টোবরের মধ্যে কারখানা চালু না হলে হয়তো আমদানির পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে সংকট হবে না।

বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকট, কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও অদক্ষতার কারণে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। গরমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিনে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫ থেকে ১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দিনে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাচ্ছে গড়ে ১০৫ কোটি ঘনফুট। এপ্রিলে গড়ে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় দেয়ার কথা। গত বছর বিদ্যুৎ খাতে গড়ে ১১০ থেকে ১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছিল পেট্রোবাংলা।