ইসমাইল আলী: নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে অবস্থিত সামিটের ৩০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা গত এক মাসে বেশিরভাগ সময়ই দুই-তৃতীয়াংশ অলস বসে ছিল। যদিও দ্বৈত জ্বালানীভিত্তিক (গ্যাস ও ডিজেল) কেন্দ্রটির জন্য এক মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)।
গত ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রটিতে উৎপাদন করা হয় মাত্র ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। পুরো মাসই এ চিত্র ছিল। মুন্সিগঞ্জের কড্ডায় অবস্থিত সামিটের ফার্নেস অয়েলচালিত অপর দুই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন চিত্র আরো করুণ। ৩০০ ও ১৪৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র দুইটিতে ২৪ এপ্রিল বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। গত এক মাসে প্রায় একই চিত্র ছিল কেন্দ্র দুইটির।
এদিকে চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) সরবরাহের জন্য আনোয়ারায় ইউনাইটেড গ্রুপের ফার্নেস অয়েলচালিত ৩০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি ২৪ এপ্রিল বন্ধ ছিল। এছাড়া জামালপুর ও ময়মনসিংহে ইউনাইটেডের ফার্নেস অয়েলচালিত ১১৫ ও ২০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র দুইটিও বন্ধ ছিল।
শুধু সামিট বা ইউনাইটেডই নয়, অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চিত্রও একই। গত ২৪ এপ্রিল বাংলা ট্র্যাকের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ডিজেলচালিত ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র ও খুলনার নোয়াপাড়ার ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতে বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন।
একইভাবে বন্ধ ছিল চাদঁপুরে অবস্থিত দেশ এনার্জির ফার্নেস অয়েলচালিত ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে অবস্থিত প্যারামাউন্টের ডিজেলচালিত ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র।
করোনাভাইরাসের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় এভাবেই বন্ধ রাখা হচ্ছে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। বিশেষত ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও বসিয়ে রেখে কেন্দ্রগুলোর জন্য গুনতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ।
আবার করোনার কারণে বিদ্যুৎ বিল আদায় অনিয়মিত হয়ে পড়ায় আয় কমে গেছে বিতরণকারি সংস্থাগুলোর। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কম মূল্যে আবাসিক গ্রাহকদের নিকট বিদ্যুৎ বিক্রি করে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে পিডিবির।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। যদিও চাহিদা সে অনুপাতে বাড়েনি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসে থাকে স্বাভাবিক সময়েও। গ্রীষ্মে চাহিদা কিছুটা বাড়লেও শীতে তা অনেক কমে যায়।
তবে এবার করোনাভাইরাসের প্রভাবে গ্রীষ্মের শুরুতেই বিদ্যুতের চাহিদা আরো কমে গেছে। ফলে সন্ধ্যায় পিক সময়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে যাচ্ছে সাত হাজার মেগাওয়াটে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে কতটুকু বিদ্যুৎ কোন খাতে ব্যবহার হচ্ছে তার সঠিক হিসাব না থাকলেও বড় অংশই আবাসিক গ্রাহক। তবে করোনার কারণে দেশের প্রায় সব শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পুরো বিদ্যুৎ এখন যায় আবাসিক ও রাস্তার বাতি জ্বালাতে ব্যবহার হচ্ছে।
যদিও দিনে বিদ্যুতের চাহিদা আরো কম থাকে। তখন এ চাহিদা সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। গত ২৪ এপ্রিল দেশে রাত ৮টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সাত হাজার ১৮৯ মেগাওয়াট। আর দুপুর ১২টায় এ উৎপাদন ছিল পাঁচ হাজার ৭৬৮ মেগাওয়াট।
করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েক দিন ধরেই উৎপাদন প্রায় একই রকম আছে। এদিকে বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১৯ হাজার ৬৩০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সক্ষমতার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বসে থাকছে।
জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় বেশকিছু কেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই গুনতে হবে। এতে লোকসান বেড়ে যাবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৩ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১১ হাজার ৫৮১ মেগাওয়াট। আর গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। গত এক বছরে নতুন প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহক বাড়ায় এ বছর চাহিদা ১৪ হাজারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তা অর্ধেকে নেমে গেছে।