Print Date & Time : 26 July 2025 Saturday 1:22 pm

বিদ্যুৎ কিনতে নেপালের সাথে আলোচনা করছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি: মোহাম্মদ হোসেন বলেন, নেপাল থেকে তুলনামূলক সস্তায় বিদ্যুৎ কেনা যাবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের যেখানে ১২-১৪ টাকা খরচ লাগে সেখানে নেপাল থেকে এই জলবিদ্যুৎ আমরা অর্ধেকেরও কম মূ‌ল্যে কিনতে পাচ্ছি।

নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে দুই দেশের মধ্যে দর কষাকষি চলছে। বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাঁচ সেন্ট (মার্কিন ডলার) মূ‌ল্যে চাইলেও নেপাল প্রতি ইউনিট বিক্রি করতে চাচ্ছে সাত সেন্ট দরে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুই দেশের মধ্যে এখনও বনিবনা না হওয়ায় আমদানি চুক্তিটি কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘দাম নিয়ে দর কষাকষি হচ্ছে, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। তবে আমরা আশা করছি এর মাঝামাঝি কোনো একটা দামে চুক্তি হবে।’

চুক্তির আওতায় নেপালের ত্রিশুলী প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। এই বিদ্যুৎ ভারতের বহরমপুর সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ভেড়ামারায় বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আগামী ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করবো, আমরা কতটুকু ছাড় দিতে পারি, নেপাল কতটুকু আর দিবে সে বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হবে এবং ঐ মিটিংয়েই মোটামুটি একটি সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।’

তবে আগামী ১৫ জুনের আগেই বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান হাবিবুর রহমান। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দাম চূড়ান্ত করতে শিগগিরই আরেকটি বৈঠক ডাকার পরিকল্পনা করছে দুই দেশ।

মোহাম্মদ হোসেন জানান, নেপালের জলবিদ্যুৎ তুলনামূলক সস্তা, সম্ভবত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের অর্ধেকেরও কম। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘নেপাল থেকে তুলনামূলক সস্তায় বিদ্যুৎ কেনা যাবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের যেখানে ১২-১৪ টাকা খরচ লাগে সেখানে নেপাল থেকে এই জলবিদ্যুৎ আমরা অর্ধেকেরও কম মূ‌ল্যে কিনতে পাচ্ছি।’

বিপিডিবি সূত্র জানায়, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হলে দুই দিক থেকেই লাভবান হবে বাংলাদেশ। যেমন শীতের যে সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়, তখন নেপালে থাকে শুষ্ক মৌসুম। দেশটির তখন বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা থাকে। ওই সময় নেপাল বরং বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে।

মূলত বিদ্যুৎ সরবরাহে বৈচিত্র্য আনতে ও জ্বালানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ বাড়াতে বাংলাদেশ বাহ্যিক উৎসের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে আগ্রহী। তবে প্রাথমিকভাবে চুক্তিটি ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে আমদানি শুরু হবে।

এদিকে, নেপাল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টও জানিয়েছে যে বাংলাদেশ উদ্ধৃত দাম কমানোর বিষয়ে নেপালের সাথে আলোচনা করতে চেয়েছিল।

নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের (এনইএ) এক কর্মকর্তা কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, ‘নেপাল তার উদ্ধৃত মূল্যে অটল থাকবে জানানোর পর বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।’

এনইএ’র নির্বাহী পরিচালক কুল মান ঘিসিংয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে।এনইএ সূত্রের বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট আরও উল্লেখ করেছে, নেপাল প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাত সেন্টে বিক্রি করবে জানালেও বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট পাঁচ সেন্ট হারে কিনতে চাচ্ছে।

এর আগে এনইএ’র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার থিকে নেপালের প্রস্তাবিত দামকে গত বছর মধ্যমেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির জন্য একটি ভারতীয় কোম্পানি যে মূল্য পরিশোধ করেছিল তার সঙ্গে তুলনা করেন।

গত বছরের মে মাসে এনইএ বিদ্যুতের জন্য ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম (এনভিভিএন) লিমিটেড-ইন্ডিয়ার সাথে প্রতি ইউনিট ৫.২৫ ভারতীয় রুপিতে পাঁচ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তিতে ট্রান্সমিশন এবং ট্রেড মার্জিন সম্পর্কিত কোনো অতিরিক্ত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

মূল্য নিয়ে বাংলাদেশের সাথে মতবিরোধের কারণে নেপালি প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে আসে। যদিও এনইএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তারা ভবিষ্যতের আলোচনায় ঐকমত্যের ব্যাপারে আশাবাদী।

কাঠমান্ডু পোস্টকে প্রদীপ কুমার বলেন, ‘তারা কিনতে প্রস্তুত এবং আমরা বিক্রি করতে প্রস্তুত। আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে এবং আমরা আসন্ন বৈঠকে একটি চূড়ান্ত চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী’।

তবে পরবর্তী বৈঠকের দিন এখনও ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। ২২ ফেব্রুয়ারি জারি করা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, উভয় পক্ষ আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নেপালের বিদ্যুৎ রপ্তানি সহজতর করার জন্য দ্রুত একটি বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি করতে চায়।এনইএ’র প্রস্তাবে ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানির কথা বলা হয়েছে।

নেপাল থেকে বাংলাদেশে রফতানি করা বিদ্যুৎ, নেপাল-ভারত ধলকেবার-মুজফফরপুর ক্রস বর্ডার ট্রান্সমিশন লাইন এবং ভারত-বাংলাদেশ বড়পুর-ভেড়ামারা ক্রস বর্ডার ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে পরিবহণ করা হবে।

নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির সহায়তা দিতে সাময়িকভাবে সম্মত হয়েছে ভারত। গত বছর প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের ভারত সফরের সময় ভারত তার বিদ্যমান ট্রান্সমিশন অবকাঠামো ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

গত মে মাসে নেপাল ও বাংলাদেশ জ্বালানি সচিব পর্যায়ের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং এনভিভিএনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়।