Print Date & Time : 22 July 2025 Tuesday 11:17 pm

বিদ্যুৎ বিলে আধুনিক ব্যবস্থার প্রচলন ঘটুক

প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সভ্য জগতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া একটি মুহূর্ত কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের সব দেশই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। গুরুত্ব বিবেচনায় আমাদের সরকারও ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো শুরু করেছে ৫ মিনিটেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার অভিনব কর্মসূচি আলোর ফেরিওয়ালা। সরকারের বড় সাফল্যের মধ্যে একটি হলো বিদ্যুতে স্বয়ংসর্ম্পূণতা। ফলে এটি বলা যায়, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দেশবাসীর বাছে নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে সংস্থাটির সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কেননা কর্মচারীদের ধারণা, মেধা ও মূল্যবোধকে উৎসাহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।   

কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে খবর আসছিল, করোনাকালে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রাহকদের। অতিরিক্ত বলতে সীমাতিরিক্ত! আগে যে গ্রাহকের মাসিক বিল আসত ৫০০ টাকা, সেটি এখন ৫ হাজার টাকা। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বাসা, অফিসের বিল ও ‘ভূতুড়ে’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছে।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘২৮৭ জনকে শাস্তির সুপারিশ, ডিপিডিসির ৫ জন বরখাস্ত’ শীর্ষক প্রতিবেদন গ্রাহকদের স্বস্তি দেবে বলেই ধারণা।

খবরে বলা হয়, বেঁধে দেওয়া সাত দিনের মধ্যে ভূতুড়ে বিল সমন্বয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত টাস্কফোর্স। গত ২৫ জুন বিদ্যুৎ বিভাগ একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে। সাত দিনের মধ্যে ভূতুড়ে বিলের সমাধান না করতে পারলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এজন্য শাস্তি দেওয়ার কথা বলে এই টাস্কফোর্স।

দেরিতে হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে, এটি প্রশংসনীয়। বিদ্যুৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অভিযোগকে তেমন গুরুত্বই দেওয়া হয় না। আবার অতিরিক্ত বিল পরিশোধ বিষয়ে সংস্থার নিয়ম হলো, বিল যা-ই হোক আগে পরিশোধ করুন। পরে সমন্বয় করা হবে। আমরা মনে করি, নিয়মটি গ্রাহকবান্ধব নয়। কর্মীদের ভুলের মাশুল গ্রাহক দেবে কেন। বিদ্যুৎ বিভাগের অনেক কর্মীর আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি নেই। অনেকের বহুতল বাড়িও আছে।  দুদকের তদন্তে এ ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে। 

গ্রাহকদের বিড়ম্বনার জন্য দায়ী কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাময়িক নয়, স্থায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্রমান্বয়ে পুরো বিলিং সিস্টেমকে প্রি-পেইড আনতে হবে। প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা গেলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, বিদ্যুতের ব্যবহারেও সাশ্রয়ী হবেন। বিদ্যুতের অপচয় হবে না। বিদ্যুৎ বিভাগের অফিস ভবন ও অন্যান্য স্থাপনাকে আধুনিকীকরণকে ‘অনন্য অর্জন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু যে আধুনিকীকরণের সুফল ও সুবিধা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গ্রাহক পান না, সেটি কোনো সাফল্যই নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকদের ভোগান্তি লাঘবে ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।