নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে এক চরম হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এবং লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে অনেকেই বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। এর ফলে লেনদেনে নেমে এসেছে ভয়াবহ স্থবিরতা, যা পুঁজিবাজারকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বড়, মাঝারি ও ছোটÑসব ধরনের কোম্পানির শেয়ারের দর কমছে পাল্লা দিয়ে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে লোকসানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা, যারা সীমিত পুঁজি নিয়ে বাজারে এসেছিলেন, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন অথবা লোকসানের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আশার আলো খুঁজছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। টানা দরপতন আর কমে যাওয়া লেনদেনে বিপর্যস্ত পুঁজিবাজারে প্রত্যক্ষ কোনো প্রণোদনা না থাকায় হতাশা আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে কার্যকর ও স্পষ্ট উদ্যোগ থাকবে, থাকবে মূলধনি মুনাফা বা লভ্যাংশ আয়ে কর রেহাই। কিন্তু এসব কিছুই মেলেনি ঘোষিত বাজেটে।
গতকাল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিনের পতনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ নেমে এসেছে পাঁচ বছর আগের অবস্থানে। রাজপথে নামা বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন, নতুন সরকারের বাজেটে বাজারকে চাঙ্গা করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট প্রস্তাবে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য প্রণোদনা দেখা যায়নি।
তবে বাজেটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলোÑতালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে পার্থক্য বাড়ানো, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনে উৎসে কর হ্রাস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব।
বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করহার শর্তসাপেক্ষে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ করলে এই ব্যবধান ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলোÑসব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা এবং নির্ধারিত সীমার বেশি লেনদেন নগদে না করা।
ব্রোকারেজ হাউসের প্রতি ১০০ টাকার লেনদেনে বিদ্যমান ৫ পয়সা উৎসে কর কমিয়ে ৩ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ১০ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশে আনার ঘোষণা এসেছে বাজেটে।
তবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উদ্যোগ মূলত প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীর সরাসরি উপকারে আসবে না। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ আয়ে কর অব্যাহতির প্রস্তাব দিলেও তা বিবেচনায় নেয়নি সরকার।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আগে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা তা পুরোপুরি আমলে নেননি। ফলে বাজারে ভালো কোম্পানি আনার যে প্রয়াস, তাতে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজার সংস্কারের নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন চলছে ধীরগতিতে। এতে পুঁজিবাজারের মন্দা আরও প্রকট হয়েছে।