Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 1:40 am

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি কাম্য নয়

দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে দুটি বড় ধস দেখা গেছে। এর একটি ১৯৯৬ এবং অন্যটি ২০১০ সালে। ’৯৬-এর চেয়ে ২০১০ সালের ধসটি ব্যাপক ছিল বলে ধারণা বাজার বিশেষজ্ঞদের। ওই ধসের বড় কারণ ছিল মার্জিন ঋণ। সে সময় গ্রাহককে ধরে রাখার জন্য অনিচ্ছা এবং নিয়মের বাইরে গিয়েও অনেক ব্রোকারেজ হাউসকে মার্জিন ঋণ নিয়েছে। ফলে বাজার বড় ধসের সম্মুখীন হয়। কিন্তু মার্জিন ঋণ নিয়ে কেনা শেয়ারে এখন পর্যন্ত কেউ মুনাফা করতে পারেননি। গ্রাহকের বিও হিসাব লোকসানে থাকলেও তা সমন্বয়ের জন্য তাগিদ দিয়ে পাঠানো হচ্ছে চিঠি। নির্দিষ্ট সময়ে সমন্বয় না করা হলে নানা ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের অনেকে আতঙ্কে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন এবং নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

আমরা মনে করি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং এতে বাজারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা বিবিয়োগকারীরা বাজারের প্রাণ। তারা নিরুৎসাহী হলে নিশ্চয়ই নিজেদের গুটিয়ে নেবেন। তাই পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখতে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও নৈতিক স্বার্থ নিশ্চিতে বড় উদ্যোগ নিতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেই (বিএসইসি)। কেন লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ সমন্বয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে; সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান চিঠি পাঠাচ্ছে সে প্রতিষ্ঠানগুলো, বিএসইসির নির্দেশনা মেনে চিঠি না পাঠালে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা থাকলে তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

মার্জিন ঋণ সমন্বয়ে চিঠি দেয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও মার্চেন্ট ব্যাংক আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টও রয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় এবং শেয়ার মার্কেটে ধরে রাখতে মার্জিন ঋণ উন্নত দেশগুলোও দিয়ে থাকে। কিন্তু 

পুঁজিবাজারের প্রাণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং তাদের বাজারে ধরে রাখতে আমাদের কমিশন কি ওই দেশগুলোর নিয়ম অনুসরণ করছে? উন্নত দেশেও বাজারে ধস নামে আবার চাঙ্গাও হয় দীর্ঘমেয়াদে। মার্কেট পড়ে গেলে আমাদের  নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা নড়েচড়ে বসে। এরপর কাজে ধারাবাহিকতা থাকে না; থাকে না নজরদারি। ফলে পুুঁজিবাজার পরিস্থিতি সাময়িক মোকাবিলা করা গেলেও সমস্যা থেকেই যায়।

শেয়ারবাজার অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মানসম্মত এবং লাভজনক করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে আইনি বাধ্যবাধকতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয় এবং আর্থিক প্রণোদনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।

শেয়ারবাজার শক্তিশালীকরণে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি’র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাপিটাল মার্কেট স্পেশাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবির ভূমিকা যাতে আগামী দিনগুলোয় আরও জোরদার করা যায়, তা নিশ্চিত করা চাই। এ লক্ষ্যে আইসিবিকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। সেই আইসিবি কি না ঢালাওভাবে মার্জিন ঋণ সমন্বয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে মার্জিন ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া হলে তা বাজারের জন্য মঙ্গল। কোনো অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন; সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।