পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়। গুজবে কান দেবেন না, বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করুন প্রভৃতি পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেকে। আশার কথাও শোনা যায়, সরকারের বিভিন্ন পলিসি পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনছে। বিএসইসির কঠোর পদক্ষেপে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন ফিরে আসছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো কৌশলে বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে মর্মে গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এমন আচরণ বন্ধ হওয়া আবশ্যক।
পুঁজিবাজারের বড় বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও গবেষণা দল আছে। এক কোম্পানিতে লোকসান হলে অন্য কোম্পানি থেকে মুনাফা তুলে নেন তারা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের টিকে থাকতে সদা সতর্ক থাকতে হয়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা জমি-জমা বিক্রি করে, স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে বাজারে বিনিয়োগ করেন। একটু ভুলের জন্য বড় মাশুল দিতে হয়। বাজার থেকে ছিটকে পড়তে হয়। ধারদেনার চাপে আত্মহননের ঘটনাও আছে।
অতিরিক্ত লোভে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিনিয়োগ করা একেবারেই ঠিক নয়। কষ্টার্জিত আয় বা অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ নিয়ে আসা উচিত নয়। আর বিনিয়োগের আগে কোম্পানিগুলোকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ এবং মৌলভিত্তি যাচাই অত্যন্ত জরুরি। ঠকে কিংবা দৃষ্টান্ত দেখে শিখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারাও এখন নিজ বিবেচনায় বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন। নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয়া কোম্পানিতে ভরসা পান। কিন্তু এখানেও কৌশল রয়েছে। ডিভিডেন্ড দেয়ায়ও হয় প্রতারণা! গতকাল শেয়ার বিজের ‘নীরব ভূমিকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা: নামমাত্র ডিভিডেন্ড দিয়ে কোম্পানির প্রতারণা’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে পাঠকরা হতাশ হবেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক শতাংশেরও কম লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে সম্প্রতি। বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে টানা লোকসানে থাকা খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল)। এ পরিমাণ লভ্যাংশ দিয়ে ‘জেড’ থেকে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে এসেছে কোম্পানিটি। ফলে বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। ৩০টি কোম্পানি এ সুযোগ নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নীরব ভূমিকায় এমন ধারা শুরু হয়েছে সম্প্রতি। ক্যাটেগরি পরিবর্তনের এমন সুযোগ শেয়ার কারসাজির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিএসইসির অনেক সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘যুগান্তকারী’ সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরাও আশান্বিত হতে শুরু করেছেন। কিন্তু ডিভিডেন্ড কারসাজিতে তারা হতাশ হবেন। এমন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে কারসাজি বন্ধে বিএসইসিকে কঠোর হতে হবে।
না বুঝে বিনিয়োগ করলে দায় বিনিয়োগকারীদেরই নিতে হবে। কিন্তু তারা কী করে বুঝবেন, ডিভিডেন্ড দেয়ায়ও কারসাজি আছে। তাই বিএসইসিকে বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে। মিথ্যা তথ্য দেয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে অথবা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাবে কম ডিভিডেন্ড দেয়া কিংবা নাÑদেয়া কোম্পানি প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। ডিএসইর ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সব তথ্য নির্ভুল থাকতে হবে। যাতে কোম্পানির সঠিক তথ্য দেখে বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আইন ও বিধিবিধান মেনে অংশীজনদের ব্যবসা করতে হবে, বিএসইসিকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।