নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের কাঠামোগত সংস্কার, করব্যবস্থা সহজ করা ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দেশের পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএসইসি ভবনে গতকাল এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাজারসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকার প্রতিনিধি, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত সাম্প্রতিক প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিষয়বস্তু ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পুঁজিবাজারের অংশীজনরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারে ব্যবধান কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, এক লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর মওকুফ, নেগেটিভ ইকুইটি সমস্যা সমাধানে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ, বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি মওকুফ, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, ব্রোকারদের টার্নওভারের ওপর অগ্রিম কর হ্রাস, বড় স্থানীয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি, সরকারি সিকিউরিটিজ ও নিলাম স্টক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্তি এবং গ্রাহক হিসাব থেকে প্রাপ্ত আয়ের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হয়।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বৈঠকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে চলতি অর্থবছরে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অর্জিত আয়ের ৮০ শতাংশ ইউনিটহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে দেয়া হোক, আর বাকি ২০ শতাংশ প্রভিশনিং করা হোক। মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর চলতি অর্থবছরের আয় থেকে ২০ শতাংশ রিজার্ভে রেখে, বাকি ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে ইউনিটহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হোক। এই প্রস্তাব বিনিয়োগকারীদের আস্থার পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএসইসির এই বৈঠকটি দেশের পুঁজিবাজার সংস্কার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে উত্থাপিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে অংশীজনরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর বিপরীতে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাব ও মতামত যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং নীতিনির্ধারকদের কাছে তা উপস্থাপন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে বিএসইসি।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিশনের অন্যান্য কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, নির্বাহী পরিচালকবৃন্দ ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
অংশীজনদের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিএসই চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, শাকিল রিজভী, রিচার্ড ডি রোজারিও, ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুদ্দিন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ ও মহাব্যবস্থাপক মাহমুদা আক্তার বৈঠকে অংশ নেন।