দেশে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে বড় বিনিয়োগ করবে বিদেশিরা। রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, প্রতি মাসে কোরিয়া ও চীনাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কোরীয় প্রতিনিধিদলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তাদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এখন সহজ ও ঝামেলামুক্ত। বিনিয়োগপ্রক্রিয়া সহজ করা আমাদের দায়িত্ব।’ পরে চীনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ৩০ সদস্যবিশিষ্ট চীনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে ছিলেন অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পরিবহন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বস্ত্র, টেলিযোগাযোগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকে তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এত অনুকূল পরিবেশ আগে কখনও ছিল না।’ তিনি বলেন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রতি মাসের ১০ তারিখে কোরিয়া ও চীনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন। কয়েকটি চীনা কোম্পানি ইলেকট্রনিক ভেহিক্যাল ট্রানজিশন, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন, উইন্ড টারবাইনের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এবং অফশোর ফটোভোলটাইক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ শীর্ষক চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন সোমবার শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক। এতে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে সুইডেনের মালিকানাধীন নিলর্ন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় অবস্থিত বিএসইজেডে বিনিয়োগের করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার বিএসইজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি এমওইউ বা সমঝোতা চুক্তি করেছে। বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য অনেকগুলো বিনিয়োগ নিশ্চিত কিংবা প্রতিশ্রুতি আনা নয়। একটা সম্মেলনে এসে কেউ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন না। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশ নিয়ে তাদের মধ্যে যে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটি ভেঙে দেয়া।’
বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্বশীলতার ওপর আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু এখানে অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। তাই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশ অনেক পিছিয়ে। এ দেশে গড় এফডিআই এখনও প্রত্যাশিত পর্যায়ে আসেনি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ১৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি এফডিআই পায়। এই দুই দেশের সঙ্গে হয়তো আমাদের তুলনা চলে না। তা-ই বলে সমপর্যায়ের দেশেগুলোর চেয়েও পিছিয়ে থাকব আমরা!
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে আমাদের নেওয়া উদ্যোগ কম নয়। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নে অংশীজনদের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার বিকল্প নেই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে উন্নতি হবে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে, সন্দেহ নেই।