Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 11:41 am

বিনিয়োগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আসছে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের আগামীর বন্দর হিসেবে বিবেচিত বে-টার্মিনাল। এবার এ টার্মিনালের গুরুত্বপূর্ণ ‘চ্যানেল খনন’ এবং ‘ব্রেক ওয়াটার’ নির্মাণে চার হাজার কোটিরও বেশি টাকা জোগান দিতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক। এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বে-টার্মিনালের সার্বিক অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করতে বিশ্বব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের ১১ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম সফরে আসছেন। এ প্রতিনিধিদল আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিনিধিদলটি চট্টগ্রাম অবস্থান করবেন।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, দেশের আমদানি ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক দশক আগে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ বে-টার্মিনাল প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্প পরিকল্পনার অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প হলো বে-টার্মিনাল। নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার সাগরতীর ঘেঁষে প্রস্তাবিত এই টার্মিনালের জেটিতে ১২ মিটার গভীরতার এবং ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারবে। কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান জেটিগুলোয় ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটারের বড় কোনো জাহাজ ভিড়তে পারে না। আর বে-টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা হবে প্রায় ৫০ লাখ টিইইউএস। অর্থাৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ পণ্য হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। গত বছর দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর ৩২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল।

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, অর্থায়নসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি।

তবে টার্মিনালটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ভিত্তিতে করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এবং জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। শুরুর দিকে প্রকল্পটি দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, সিঙ্গাপুরের পিএসএ, ভারতের আদানি গ্রুপ, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজেটি) এবং দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ওশান অ্যান্ড ফিসারিশ মিনিস্ট্রি অপারেট হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী প্রকাশ করেছিল। তবে অপারেটর নিয়োগের আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নই বর্তমানে মুখ্য হয়ে উঠেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের এই বিপুল অর্থ জোগান দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বিদেশি সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক এবং কোরিয়ার এসবিএফসি ইতোমধ্যে বে-টার্মিনালের এ দুইটি খাতে পুরো অর্থ বিনিয়াগের প্রস্তাব দিয়েছে।

বন্দর কর্মকর্তা জানায়, বিশ্বব্যাংক বে-টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল খননে সব অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি এ ঋণ প্রদান করতে চায়। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তাদের প্রস্তাবনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরেজমিনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিশ্বব্যাংকের একটি টেকনিক্যাল দল আগামী ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে। টেকনিক্যাল মিশনের অংশ হিসেবে প্রতিনিধিদলটি বে-টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন, সাগরের গতি প্রকৃতি, সে াতের তীব্রতা, জোয়ার-ভাটাসহ নানা বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট মি. হুয়া তানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলে সিনিয়র ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম লিডার রাজেশ রোয়াতগি, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর দিলশাদ দোসানি, সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল লিসবেট কুগলার, সিনিয়র স্যোশাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট মোরিসিও মোনটেরিও ভিয়িরা, স্যোশাল ডেভলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সাব্বির আহসান, সিনিয়র প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট শ্রীনিবাস ডেভারাকোন্ডা, সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন চৌধুরী, ট্রান্সপোর্ট কনসালটেন্ট তিয়ান মার্টিন, সিনিয়র পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার কোমেলিস জোহানিজ ক্লাভার, সিনিয়র ড্রেজিং ইঞ্জিনিয়ার ড্রিক রোকিমা রয়েছেন। এছাড়া প্রতিনিধিদলটি বে-টার্মিনালের টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

উল্লেখ, বে-টার্মিনালের প্রতিটি টার্মিনালে ৩০০ মিটার করে ছয়টি জেটি থাকবে। কমপক্ষে ৫০০০ টিইইউএস ধারণক্ষমতার প্রায় ১২ মিটার ড্রাফট ও ২৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ নোঙর করতে পারবে। একসঙ্গে ৩৫টি জাহাজ এই টার্মিনালে নোঙর করতে পারবে এবং অতিরিক্ত ৫০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব হবে। আর জাহাজ চলাচলের জন্য জোয়ার-ভাটার অপেক্ষা করতে হবে না।