পিপিপি কর্মশালায় রাষ্ট্রদূতরা

বিনিয়োগ নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিনিয়োগ বাড়াতে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই অর্থের জোগান হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিনিয়োগ নেয়ার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। এসব উৎস থেকে অর্থ নেয়া ও বিনিয়োগের সক্ষমতা বৃদ্ধি নির্ভর করে কোনো দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে দেশটি কোথায় কোথায় বিনিয়োগ বাড়াবে। একে কেন্দ্র করেই সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে যায়। বাংলাদেশে সরাসরি ও যৌথ বিনিয়োগ আকর্ষণে এসব পরামর্শই দিলেন চার দেশের রাষ্ট্রদূত।

গতকাল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে এক সেমিনারে এমন কথা বলেন তারা। ‘টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ পিপিপির ভূমিকা, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এমন কথা বলেন তারা। করোনা-পরবর্তী ও জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রতিপাদ্য হিসেবে রাখা হয়েছে এ কর্মশালায়।

রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের  সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইশা ইউসুফ ইশা আলদুহাইলেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, চীনের রাষ্ট্রদূত লি ঝিমিং ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান।

এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপির জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এ কে এম মামুনুর রশিদ। মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিমালা নেয়া হয়েছে। ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে ইতোমধ্যে।

 সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইশা ইউসুফ ইশা আলদুহাইলেন বলেন, পিপিপির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সৌদি আরব বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে আরামকোর মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশেরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা দুই দেশই এজন্য কাজ করতে পারি।

তুরস্কের উদাহরণ দিয়ে রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, কোনো দেশের বিনিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। এরপরই সে অনুযায়ী বিনিয়োগ আনতে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হয়। পিপিপির মাধ্যমে তুরস্ক দুই শতাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর সুফল দেখছে এখন আধুনিক তুরস্ক। এজন্য প্রয়োজন একটি নীতিনির্ধারক ফোরাম। যারা দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে কাজ করবে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে চাই।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবকিছু একই ছাতার নিচে নিয়ে আসার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, বিডা এখনো অনেক সেবা দিতে পারছে না। কোম্পানি নিবন্ধন থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজের জন্য পৃথক পৃথক অফিসে যেতে হচ্ছে। বিডার সেবার পরিধি ও মান বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

এর উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে বিডায় সব সেবা চালু হবে। তখন একটি মাধ্যমেই আপনারা সব ধরনের নিবন্ধন ও অনুমতি নিতে পারবেন। কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। অনলাইনের মাধ্যমেই কোম্পানির অনুমোদন সংক্রান্ত সব কিছুই পাবেন।

চীনের রাষ্ট্রদূত লি ঝিমিং বলেন, দেশে মেগা প্রকল্পগুলোতে চীন বিনিয়োগ করছে। আরও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচুর চীনা কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। আরও অনেকেই করতে চাচ্ছে। এজন্য পিপিপি একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে।

বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, পিপিপি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এর কিছু জটিলতা রয়েছে।

কর্মশালায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সাউল ইমানভা, এশিয়ার ইনভেস্টমেন্ট কর্মকর্তা, ড. এস এম মঞ্জুরুল এইচ খান, সেন্টার ফর এশিয়ান ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল পলিসি স্টাডিজের সিনিয়র উপদেষ্টা মঞ্জুরুল এইচ খান ও আইসিসিসিএডি’র পরিচালক ও ডা. সেলিমুল হক বক্তব্য দেন।