নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল। আর চট্টগ্রামে রয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে, অবকাঠামোগত সুবিধা, সস্তা শ্রমসহ বহুমাত্রিক সুবিধা। এ অঞ্চলে শিল্প ও উৎপাদন খাতের নতুন নতুন বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা দেখতে কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০ ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গতকাল দিনব্যাপী চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা এবং মিরসরাইয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ শীর্ষক এ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এর মধ্যে শুরু হয়েছে বিনিয়োগ সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক যাত্রা। আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করা হবে আগামী বুধবার। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ওই দিন সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সম্মেলন আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। এ সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক যাত্রার প্রথম দিনে আজ দেশি-বিদেশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের চট্টগ্রামের দুটি বিশেষ শিল্প এলাকা পরিদর্শন করানো হয়। এদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসব বিনিয়োগকারীরা কেইপিজেডে অবস্থিত ইয়াংওয়ান করপোরেশনের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখেন। তখন বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরাও কর্মক্ষেত্র নিয়ে তাদের ব্যাপক সন্তুষ্টির কথা তুলে ধরেন পরিদর্শনকারী দেশি-বিদেশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছে। কারখানা পরিদর্শন শেষে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে কেইপিজেডে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়। এ সময়ে পরিদর্শনকালে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা ইয়াংওয়ান গ্রুপের বিনিয়োগ, উৎপাদিত পণ্য, রপ্তানির পরিমাণ, কর্মসংস্থান, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী বাধা রয়েছে প্রভৃতি বিষয়ে জানতে চান। চার ঘণ্টার বেশি কেইপিজেড এলাকা পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইয়াংওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। এ সময় কিহাক সাং বলেন, ব্যবসার জন্য বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনাময়। তবে প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। তবে এই বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ লাভজনক বিনিয়োগের জন্য উত্তম গন্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে তিনি এ দেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন বলে জানান। ৭০ লাখ বর্গফুটের বেশি আয়তনের কেইপিজেডে ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সবকটি প্রতিষ্ঠানই সবুজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই তৈরি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট। এর বাইরে জুতা ও ব্যাগের একাধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এ বিষয়ে কেইপিজেডের কর্মকর্তারা বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে একমাত্র ইপিজেড এটা। ১৫ ইনভেস্টর আছে এখানে। নতুন বিনিয়োগকারীদের আমাদের অবস্থা দেখাতে এনেছি। সুযোগ-সুবিধা সব দেখার পরে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এ ইপিজেডে এখন যত কারখানা আছে তার চেয়ে আরও বেশি করা যাবে। ঢাকায় সামিটে আসা কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের ইয়াংওয়ানের তত্ত্বাবধানে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনে আনা হয়েছে। আরও অনেক বিনিয়োগকারী আসবেন।
কেইপিজেড পরিদর্শন শেষে এদিন বিকালে অর্ধশতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান। দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (এনএসইজেড) বেজা কর্তৃক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে এশিয়ান পেইন্টস, বার্জার, নিপ্পন ম্যাকডোনাল্ড স্টিলসহ মোট ১১টি কারখানা এরই মধ্যে এনএসইজেডে উৎপাদনে রয়েছে। আরও ২৮টি কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়া এনএসইজেডের এক হাজার একর উপ-জোনে বিভিন্ন দেশের ৪১টি কোম্পানি কারখানা স্থাপনের জন্য ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এদিকে বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এজন্য সরাসরি বিনিয়োগ করবেন, এমন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামিদামি বেশ কিছু কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধিরাও নিবন্ধন করেছেন।