মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডে লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট চান না ইউনিট হোল্ডাররা। তাদের দাবির মুখে ফান্ডগুলোর রি-ইনভেস্টমেন্ট বন্ধ করতে আইনের সংশোধন খসড়া প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হলেও গত দুই বছরে এটি বিএসইসির অনুমোদন পায়নি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খসড়া চূডান্ত হওয়ার পরও বেশ কিছু মিউচুয়াল ফান্ড রি-ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা করেছে। অভিযোগ রয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি চায় না যে, আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন চূড়ান্ত হোক। মুলত সে কারণেই আইন সংশোধের বিষয়টি ঝুলে আছে।
প্রস্তাবিত সংশোধন খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীদের কখন লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট বা পুনর্বিনিয়োগ দিতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সংশোধনী খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য ওই ফান্ডের বাজারদরের তুলনায় কম হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি লভ্যাংশ আকারে রি-ইনভেস্টমেন্টের প্রস্তাব করতে পারবে না। তা ছাড়া লভ্যাংশ আকারে রি-ইনভেস্টমেন্ট অনুমোদন হলেও বিনিয়োগকারীকে নগদ বা রি-ইনভেস্টমেন্ট, এই উভয় পদ্ধতির মধ্যে যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
গত কয়েক বছর একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি রি-ইনভেস্টমেন্ট আকারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে। এতে ইউনিট হোল্ডারদের অন্তত ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেনে-বুঝেই সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এমন লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছিল। ফান্ডগুলো ট্রাস্টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে ওই লভ্যাংশ অনুমোদন করে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ-সংক্রান্ত আইনের ধারায় সংশোধন আনার উদ্যোগ নেয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, একই দিনে আইপিও আইনে (পাবলিক ইস্যু রুলস) সংশোধন খসড়া অনুমোদনের পর জনমত যাচাই শেষে তা চূড়ান্ত ও কার্যকর করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে আইপিও আইন সংশোধন হয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও আলোর মুখ দেখেনি মিউচুয়াল ফান্ডের আইন সংশোধন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আশা করছি শিগগির এটির অনুমোদন দিতে পারবে বিএসইসি। একই বিষয়ে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, শুধু মিউচুয়াল ফান্ডের কোনো সিদ্ধান্তই নয়, পুঁজিবাজারে যে কোনো সিদ্ধান্তই বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে করা উচিত। কারণ যারা বর্তমানে পুঁজিবাজারের সঙ্গে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত। সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
জানা যায়, নতুন সংশোধন খসড়ায় মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বমোট মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ নীতি কমিশনের একটি নির্দেশনা অনুসারে কার্যকর রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, চাইলে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডকে বেমেয়াদিতে রূপান্তরের সুযোগ বহাল থাকবে। এ ছাড়া মেয়াদি ফান্ডের মতো বেমেয়াদি ফান্ড স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এক্ষেত্রে এ ধরনের ফান্ডের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান তিন থেকে পাঁচ শতাংশ সীমাবদ্ধ রাখা নিশ্চিত করা হবে। বিনিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে সব ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের মাসিক ভিত্তিতে পোর্টফোলিও প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, ফান্ড ব্যবস্থাপকদের ফি নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া ফান্ডগুলো লভ্যাংশ ঘোষণায় ব্যর্থ হলেও ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিশন ইচ্ছা করলেই কমিয়ে দিতে পারবে। একইসঙ্গে ফান্ড ব্যবস্থাপক কট প্রাইসের ওপর নগদ লভ্যাংশ দিতে পারলেও তখন বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। এছাড়া ফান্ডগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমিশনের সম্মতিপত্র নিয়ে নিয়োগ হবে। এছাড়া ফান্ডগুলোর সম্পদমূল্যে সপ্তাহের পরিবর্তে প্রতিদিনই গণনা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি পক্ষকে সুযোগ করে দিতেই বিএসইসি সম্ভবত বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে। তা না হলে বিষয়টি এতদিন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা।’
এদিকে আইনটি চূড়ান্ত না হওয়ায় গত বছরও কিছু ফান্ড ঠিকই কাজটি করে ফেলেছে। আগের মতোই ফান্ডগুলোর রি-ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও খসড়ায় বলা ছিল, চূড়ান্ত অনুমোদন না হলেও ফান্ডগুলোকে রি-ইনভেস্টমেন্ট দিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেনি ফান্ডগুলো।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি চায় না যে, আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন চূড়ান্ত হোক। তারা প্রস্তাবিত সংশোধনে ব্যাপক রদবদল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।