Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 10:33 pm

  বিনিয়োগের অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা জরুরি: রাষ্ট্রপতি

 

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে বিনিয়োগের অর্থের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিরীক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, জাতীয় অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ হচ্ছে, তার পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (সাফা) আঞ্চলিক সিএফও সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা প্রফেশনাল নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে পাবলিক ও করপোরেট খাতে হিসাবের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেনÑএ প্রত্যাশা করি।’

ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ বলেন, হিসাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। এতে তথ্যের আদান-প্রদান যেমন সহজ হয়, তেমনি জনগণও কাক্সিক্ষত সেবা সহজে পেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রধান নির্বাহীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। আর্থিক কর্মকাণ্ডে সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তথা দেশের জন্য হুমকি। এর ফলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অর্থ জাল-জালিয়াতি হচ্ছে।’

জনগণের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের কথা অনুষ্ঠানে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জনগণের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসাববিদ এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। হিসাব ও নিরীক্ষার মানোন্নয়নে লাগসই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আর্থিক স্বচ্ছতা ও অর্থের নিরাপত্তা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘আমি আশা করছি, এ সম্মেলনের মাধ্যমে সাফাভুক্ত দেশগুলোর পাবলিক-প্রাইভেট কোম্পানির মালিক, পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে হিসাবের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো স্বল্প আয়তনের এবং জনবহুল। জনবহুল হলেও এর রয়েছে অপার সম্ভাবনাময় জনশক্তি। এ মেধাবী শক্তির সঙ্গে যদি আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় করতে পারি, তবে তা খুলে দেবে আমাদের প্রতিটি দেশের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা হবে সুদূরপ্রসারী।

সার্কভুক্ত দেশের সরকারগুলো ‘দারিদ্র্যের অভিশাপের’ বিরুদ্ধে লড়ছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

সেই সঙ্গে সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোতে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও  প্রক্রিয়ায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কৌশলগত কর্মপ্রণালির মাধ্যমে এর প্রভাব সমাজে পড়ছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্র্যাবলি, গ্রহণযোগ্য দায়িত্ব পালন এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সে-সম্পর্কিত তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতাই হলো জবাবদিহি। বর্তমান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে বিশেষত প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাকে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ক্রমাগত অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ছে। স্বার্থগত দ্বন্দ্ব মোকাবিলায় প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। আর্থিক ব্যবস্থাপনা,  সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দিকনির্দেশনা দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এ তথ্যপ্রযুক্তি। এ সম্মেলনের তিনটি টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থাপিত প্রবন্ধগুলো সে আলোকে বক্তব্য থাকবে এবং প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সেখান থেকে উপকৃত হবেন, বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (আইএফএসি) প্রধান নির্বাহী ফায়েজুল চৌধুরী।

অন্যদের মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হানস উগেরভোর্স্ট, সাফা সভাপতি এএসএম নাঈম, আইসিএবির প্রেসিডেন্ট আদিব হোসেন খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।