বিভাজন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) বিভাজনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। গতকাল নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে ‘আধুনিক নাগরিক সেবা ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় মেয়র মন্ত্রীর কাছে বেশকিছু দাবিও তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তৃতায় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘নাগরিকের আধুনিক সুবিধা নিশ্চিতে নগর সরকারের বিকল্প নেই। এই সংস্থার মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন নগর সরকারের। আমি মন্ত্রীর কাছে এ দাবিটি আবার জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলছি। আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। চার বছর আগের ঢাকা ও আজকের ঢাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কাটিয়ে জনগণকে সচেতন করে এই দুইয়ের সমন্বয়ে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’

সাঈদ খোকন বলেন, ‘২০১১ সালে ঢাকাকে বিভাজন করা হয়। বিভাজনে ঢাকা দক্ষিণ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হয়তো ভূমি জরিপ বা এলাকাগত বিষয়ের কারণে এই ক্ষতি হয়। বিভাজনের পর রাজস্ব আয়ের ৪০ ভাগ পায় ডিএসসিসি ও ৬০ ভাগ পায় ডিএনসিসি। অপরদিকে রাজস্ব ব্যয়ের ৬০ ভাগ খরচ হয় ডিএসসিসির আর ৪০ ভাগ খরচ হয় ডিএনসিসির। এটা বড় বৈষম্য।’

মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আট বছর আগে জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু আজও তা অনুমোদিত হয়নি, এটা দুঃখজনক। বর্তমানে আমাদের মাত্র ৪০ শতাংশ জনবল রয়েছে, যা দিয়ে কোনোভাবেই নাগরিকদের শতভাগ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকবে, এটা হতে পারে না। তাই মন্ত্রীকে বলতে চাই, আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল দিন।’

ডিএসসিসির রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৩০ বছর ধরে ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট বন্ধ রয়েছে। নির্বাচনের আগে আমরা ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের কারণে তা বন্ধ করতে হয়েছিল। আমাদের এ সেবা সংস্থাটিকে স্বাবলম্বী করতে ওই প্রজ্ঞাপনটি উঠিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলরদের বিভিন্ন দাবি রয়েছে বলে মন্ত্রীকে জানান মেয়র সাঈদ খোকন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গৃহ অ্যাসেসমেন্ট করে কর নির্ধারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নির্বাচনের কথা চিন্তা করে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই অ্যাসেসমেন্ট বন্ধ করে দেয়। তাই দ্রুত সেই প্রজ্ঞাপন তুলে নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট করার সুযোগ করে দিন। জনবল বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মেয়র।

নগরসেবা নিশ্চিত করার জন্য নগর সরকারের বিকল্প নেই। ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও নগর সরকার শুরু করার আহ্বান জানিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, নগর সরকার শুরু করার এখনই সময়।

মেয়র খোকন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীদের পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব সেবা সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি পরিপত্র জারি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি সব সেবা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে সমন্বয় সভা করতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে দুই-একটি সেবা সংস্থার প্রধান ছাড়া বাকিরা আসেন না। তাদের কাজ থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে যাকে পাঠানো হয়, সে আসলে কিছু বলতে পারে না। সে আসলে ওই বৈঠকে বসার যোগ্য নয়। ফলে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিলে সেটার ফলোআপ হয় না, যে কারণে সেই উদ্যোগের সফলতা নেই।

মেয়র বলেন, সমন্বয়ের অভাবে আমরা কোনো রাস্তা কার্পেটিং করার পর ১০ দিন না যেতেই আবার রাস্তা কাটা হয়। তাই অন্যান্য সেবা সংস্থা যদি এক মাস আগে আমাদের জানায়, তাহলে আমাদের প্রস্তুতি থাকে। এজন্যই দরকার সমন্বিত কর্তৃপক্ষ বা নগর সরকার। যে নামেই ডাকা হোক না কেন একটা নগর সরকার দরকার। এজন্য তিনি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সব কাজে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে এসেছি আপনাদের বলার জন্য যে, আসেন একসঙ্গে কাজ করি। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। আপনাদের পরামর্শ থাকলে সেটাও আপনারা বলেন। কোথাও কোনো সমস্যা হলে সেটা সমাধান করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। যেগুলো এখনও সমাধান হয়নি, সেটা নিয়ে কাজ করুন, আমরা সহায়তা করব। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।’

মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুক, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন প্রমুখ।