শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটে পুঁজিবাজারগুলোয় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম নিম্নমুখী ছিল গত শুক্রবার। অর্থাৎ গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন কমেছে। একে বিরল সাপ্তাহিক পতন বলছেন বিশ্লেষকরা। তবে এখনও গত ১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে আলোচ্য সপ্তাহটি। খবর: এপি।
বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ছিল সর্বোচ্চ অবস্থানে। সেখানে থেকে শুক্রবার সূচক কমে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এদিন ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ কমে ১৪৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। নাসডাক কম্পোজিট সূচক কমে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
শুক্রবার সকালে পাইকারি পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি-বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখনও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসেনি। অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের তুলনায় জানুয়ারিতে পণ্যের দাম বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে একই প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবনযাত্রার ব্যয় পূর্বাভাসের চেয়ে বেড়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সরকারি বন্ডের দাম বেড়ে যায়। এতে পুঁজিবাজারের ওপর চাপ পড়ে। তাই বিনিয়োগকারীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার কমানোর ব্যাপারে আশাবাদী নন। তাদের ধারণা ছিল, আগামী মার্চে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমিয়ে আনবে। এমনকি আগামী মে মাসের আগেও অর্থনীতি চাঙা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
বর্তমানে ১০ বছরের মার্কিন বন্ডের হার ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ, এর আগে যা ছিল ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। দুই বছর মেয়াদি বন্ডের হার ফেডের প্রত্যাশামতো অবস্থানে রয়েছে, যা ডিসেম্বরের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। উচ্চ সুদহার এবং বন্ডগুলো ঋণ করাকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। এতে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ছে এবং বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে।
ন্যাশনওয়াইডের প্রধান বিনিয়োগকারী গবেষক মার্ক হ্যাকেট বলেন, অক্টোবর থেকে যে ধারা দেখা যাচ্ছে, সে অনুযায়ী প্রত্যাশিত অবস্থানে থাকবে পুঁজিবাজার। তবে মূল্যস্ফীতির কারণে কিছুটা প্রভাব পড়ছে।
একই সময় বিনিয়োগকারীদের আশা, উচ্চ নীতি সুদহারের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সঠিক পথে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। গত বৃহস্পতিবার একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ক্রেতাদের মধ্যে খরচের প্রবণতা বাড়ছে। তবে তা অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশামতো নয়।
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১২ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি তিন শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গত মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকলে কোম্পানিগুলো মুনাফা করবে। ফলে শেয়ারের দাম বাড়বে। শুক্রবার অ্যাপ্লায়েড ম্যাটেরিয়ালসের শেয়ারের দাম ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ প্রান্তিকে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার তুলনায় বেশি মুনাফা করায় তাদের শেয়ারদর বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সেমিকন্ডাক্টর চিপের জন্য নকশা ও সিস্টেম উৎপাদন করে। তাদের পণ্যগুলো এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানি কয়েনবেজ গ্লোবালের শেয়ারের দাম ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাও পূর্বাভাসের তুলনায় প্রত্যাশাতীত আয় করেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়েছে।
অন্যদিকে পতনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে ডিজিটাল র্যালি। তাদের শেয়ারের দাম কমেছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রত্যাশার চেয়ে কম মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সবমিলিয়ে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ কমেছে ২৪ দশমিক ১৬ পয়েন্ট। এতে তাদের পয়েন্ট হয়েছে ৫ হাজার ৫ দশমিক ৭৬। ডাও জোনসের পয়েন্ট নেমে এসেছে ৩৮ হাজার ৬২৭ দশমিক ৯৯-এর স্তরে। নাসডাক কম্পোজিট সূচক ১৩০ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৭৭৭ দশমিক ৬৫-এ অবস্থান করছে।
বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারের মধ্যে এশিয়া ও ইউরোপের সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী ছিল। জাপানের প্রধান সূচক নিক্কেই ২২৫, এটি ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। তবে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে।