শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শীতপ্রধান দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসা অনেকটা গ্রীষ্মকালের ওপর নির্ভরশীল। অথচ চরম আবহাওয়ার প্রভাব পড়ছে দেশগুলোর পর্যটন খাতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো। খবর: এপি।
মহামারির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে পর্যটন খাতের ওপর। যেমন কভিডকালে বেশিরভাগ দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এ কারণে অন্যান্য অনেক খাতের মতো এ খাত সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিতে পড়েন। সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরে সবকিছু আরও স্বাভাবিক হবে। কিন্তু এখন মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চরম আবহাওয়া, যাকে নতুন মহামারি বলা হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসা চাঙা থাকে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন ঘন তীব্র দাবদাহ, দাবানল এবং ঝড় হচ্ছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়, যা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের লিগেসি ভ্যাকেশন রিসোর্টসসের মালিক জ্যারেড মেয়ার্স। তার প্রতিষ্ঠানের ৮টি শাখা রয়েছে, এর মধ্যে ৪টি ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে। গত বুধবার দেশটিতে আঘাত হানে হারিকেন (ঘূর্ণিঝড়) ইডালিয়া। এ কারণে তার একটি রিসোর্ট অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। আরেকটি রিসোর্ট বর্তমানে নতুন অতিথিদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এর অর্থ ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ধ্বংসাবশেষ ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া পুনরায় সামুদ্রিক ঘাস রোপণ করা না পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছেন না তারা। কেননা ঝড় মোকাবিলায় এখানকার গাছগুলো রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। তাই পরবর্তী ঝড়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
মেয়ার্স বলেন, হারিকেনটি সরাসরি আঘাত না করলেও আমাদের আর্থিকভাবে সর্বনাশ করেছে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।
ইডালিয়ার কারণে বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দেয়ায় ফ্লোরিডার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝড়টি দুর্বল হওয়ার পর আবার সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধ্বংসাবশেষ ও আবর্জনা পরিষ্কার করছেন তারা। ঝড়ের কারণে বিভিন্ন এলাকার গাছপালা উপড়ে গেছে, ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে, বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এরপর ঝড়টি প্রতিবেশী জর্জিয়া এবং সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যেও আঘাত হানে।
মেয়ার্স ফ্লোরিডার বাসিন্দা। তিনি ঘূর্ণিঝড়ে অভ্যস্ত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঝড়ের মারাত্মক প্রভাব নিয়ে তিনি শঙ্কিত।
নেচার কমিউনিকেশন্সের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৪০ মাইল (৩৮৫ কিলোমিটার) বেগের ঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২০ সাল থেকে বিশ্বে বছরে এ ধরনের গতিবেগের ১৫টি ঝড় হচ্ছে, যা ১৯৮০ সালে ছিল ৫টি।
কিথ র্যান্ডাল নামের আরেক স্থানীয় এক বাসিন্দা ঝড়ের পর তার দোকানে পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসগুলো পরিষ্কার করছিলেন। ক্রিস্টাল রিভার শহরে তার দোকানটির অবস্থান। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার এলাকা থেকে প্রায় ১০০ মাইল দক্ষিণে তিনি থাকেন। দোকান পরিষ্কার করতে করতে র্যান্ডাল বলেন, মেঝেতে যা কিছু রাখা ছিল, সব শেষ হয়ে গেছে। এখানে যে কার্ডবোর্ডগুলো ছিল, তা আমরা পরিষ্কার করছি। দেয়ালের তাকেও অনেক মালামাল রাখা ছিল। তবে এগুলো ঠিকঠাক আছে। অনেক কিছুই পরিষ্কার করতে হচ্ছে।
মাইনে অঙ্গরাজ্যের সাচোয় ফিটপ্যাকিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক স্টিভ সিলবারবার্গ বলেন, চরম আবহাওয়ার কারণে তাদের গ্রাহক সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যান ইয়োসেমিটিতে গত মার্চে তুষারপাত অন্য যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে যায়, অথচ শীতকাল শেষে সেখানে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে।
চলতি গ্রীষ্মে আরেক ঘূর্ণিঝড় হিলারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির অনেক অঞ্চল। হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে গত ১০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। এতে দ্বীপ মাউইয়ের পর্যটনখাত ক্ষতিগ্রস্তÍ হয়।