বিলপ্তির পথে মীরকাদিমের ধবল গরু

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: ধবল গরু এই নামটির সঙ্গে মিশে আছে মীরকাদিম নামের একটি জনপদের নাম। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে ধবল গরুর চাহিদা ছিল ব্যাপক। ভেজালযুক্ত খাবার ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের প্রতিযোগিতায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে ধবল গরুর। তবুও কিছু প্রান্তিক খামারিরা ছোট পরিসরে আগলে রেখেছে পূর্ব পুরুষদের শৌখিন এই ধবল গরুর লালন-পালন।

ঢাকার পার্শ^বর্তী এলাকা হিসেবে মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমের ধবল গরু পুরান ঢাকার হাটে কোরবানির ঈদে প্রধান আকর্ষণ বলা হয়। শুধু মীরকাদিমের ধবল গরু বিক্রির জন্য পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের গণি মিয়ার হাটের প্রচলন শুরু হয়েছিল।

জানা গেছে, এক সময় মীরকাদিমের দুই শতাধিকের বেশি খামারি কয়েক হাজার ধবল গরু লালন-পালন করে কোরবানির ঈদের আগে সেই হাটে নিয়ে যেতেন বিক্রির জন্য। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের অসাধু প্রতিযোগিতাসহ নানা প্রতিকূলতায় এখন হারিয়ে যাচ্ছে ধবল গরুর ঐতিহ্য।

এখানকার ধবল গরুর খামারিরা জানান, বর্তমানে খামারির সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১০-১২ জনে। এখর আর খামারিরা ধবল গরু নিয়ে দল বেঁধে রহমতগঞ্জের হাটে যান না খরচ বেশি হয় বলে। কিন্তু পুরান ঢাকার শৌখিন মানুষ মীরকাদিমের খামারে এসেই পছন্দ করে ধবল গরু কিনে নিয়ে যান।

এদিকে ঢাকা থেকে ধবল গরু কিনতে আসা আসাদ উল্লাহ বলেন, প্রতি কোরবানির ঈদে ধবল গরু কিনে থাকি। কারণ বাচ্চারা সাদা রঙের গরুগুলোকে বেশি পছন্দ করে থাকে। বর্তমানে যে অবস্থা মীরকাদিমে এসে বুঝতে পারলাম আগের মতো খামারিদের সংখ্যা নেই। পুরোনো খামারে গিয়ে দেখি, সেখানে আর ধবল গরুর খামার নেই। সে জায়গাগুলোয় বসতবাড়ি তৈরি হয়েছে। এবার তাই ক্ষাণিকটা বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। এ ধবল গরু কিনতে এসে নানা জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে; তাই এখনও গরু কেনা হয়নি আমার। অন্যদিকে ভিন্ন কথা বলেছেন কেরানীগঞ্জের আব্দুছ সালাম। তিনি বলেন, আগে থেকে চুক্তি করে রাখায় ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। বরং ধবল গরু তরতাজা, কোনো রকম ভেজাল নেই।

মীরকাদিমের ধবল গরুর খামারি করিম উদ্দিন জানান, খামারিদের নিজস্ব মিলে ভাঙানো খৈল, ভুসি, কুড়া, চালের গুঁড়া খাইয়ে পরম মমতায় নিজ সন্তানের মতো লালন-পালন করা হয় এই ধবল গরুগুলোকে।

খামারের ভেতরের পরিবেশ রাখা হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মীরকাদিমের এই ধবল গরুর চোখের পাপড়ি সারা শরীর সাদা হওয়ায় এই গরু-ধবল গরু নামে পরিচিত। বর্তমানে বাজারে ধবল গরুগুলো সাধারণত ২ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পাদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, মীরকাদিমের ধবল গরুর বিশেষত্ব এই গরু লালন-পালনে কোনো ধরনের ইনজেকশন বা গরু মোটাতাজাকরণ ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য ধবল গরু বিলুপ্তির পথে, ধবল গরুর সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।