Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 4:18 am

বিশেষায়িত গার্মেন্ট পার্ক স্থাপনে চুক্তিবদ্ধ হলো ৪১ প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে একটি বিশেষায়িত গার্মেন্ট পার্ক স্থাপনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বিজিএমইএর মধ্যে ৪১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। একই সঙ্গে জাইকার মাধ্যমে ‘ওশান ফ্রন্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনে প্রস্তুতিমূলক জরিপের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল এ চুক্তি সাক্ষর হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমাদ কায়কাউস। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, জাইকা বাংলাদেশ প্রধান হায়াকায়া ইউহো এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. রুবানা হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। এরই মধ্যে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এখানে নিশ্চিত হয়েছে। এ শিল্পনগরে এরই মধ্যে শেখ হাসিনা সরণি নির্মাণ, সুপারডাইক নির্মাণ, গ্যাস সংযোগ প্রদান ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শেষ হয়েছে। এ শিল্পনগরে বর্তমান ১৩টি শিল্প নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে এবং আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠান শিল্প নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ শিল্পনগরের মাধ্যমে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বেজা ও বিজিএমইএর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর একটি বিশেষায়িত গার্মেন্টস পার্ক স্থাপনে ৪১টি প্রতিষ্ঠানের ২৩৯ একর জমির ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। এছাড়া জাপানিজ বিনিয়োগকারী কর্তৃক এ শিল্পনগরে একটি ‘ওশান ফ্রন্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনে প্রস্তুতিমূলক জরিপের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে জাইকার সঙ্গে।

বিজিএমইএ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের উৎপাদন ও রপ্তানির পথ সুগম হবে। বিজিএমইএ গার্মেন্ট ও গার্মেন্ট একসেসরিজ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সেই লক্ষ্যে বেজার আওতাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদানে বেজা সম্মত হয়।

বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, বিজিএমইএ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে একটি পরিকল্পিত গার্মেন্ট জোন করার বিষয়ে বেজার সঙ্গে কাজ শুরু করার মাত্র দুই বছরের মাথায় শিল্প স্থাপনের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছে। এজন্য বিজিএমইএ বেজার প্রতি কৃতজ্ঞ। বেজা ও বিজিএমইএর মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষর হলো এর মাধ্যমে বিজিএমইএর দীর্ঘ দিনের চাওয়া বা স্বপ্ন পূরণ হলো।

জাইকা বাংলাদেশ প্রধান হায়াকায়া ইউহো বলেন, জাইকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়নে অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত। আশা করা হচ্ছে, জাপানের বিনিয়োগকারীরা এ শিল্পনগরে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো বলেন, জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে জাপানিজ ইকোনমিক জোন স্থাপনে বেজার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে তার দেশ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়নে তারা অংশীদার হতে পারবেন।

আহমদ কায়কাউস বলেন, এ উদ্যোগের ফলে বিজিএমইএ ও বেজার মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং ভবিষ্যতে এ গার্মেন্ট ভিলেজের সফল বাস্তবায়নে বেজা ও বিজিএমইএ একসঙ্গে কাজ করবে এবং পরিকল্পিত শিল্প বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।

সভাপতির বক্তব্যে পবন চৌধুরী বলেন, বিজিএমইএ দ্রুত এ শিল্প স্থাপন করলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ওপর জনস্রোতের চাপ কিছুটা হলেও কম হবে এবং বন্দরের পার্শ্ববর্তী হওয়ার কারণে পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে। এতে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।