ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন হ্রাস

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহতের শঙ্কা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেন-রাশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রভাব এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধিতে বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কম থাকার মধ্যেও সম্প্রতি তেলের দাম কমেছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওপেক ও ওপেক প্লাসভুক্ত রপ্তানিকারক দেশগুলো বুধবার তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রপ্তানিকারক দেশগুলোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী নভেম্বর থেকে দৈনিক দুই মিলিয়ন ব্যারেল তেল কম উত্তোলন করবে সদস্য দেশগুলো। এদিকে তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্তে আসন্ন শীতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খল আরও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এ পণ্যটির দাম অনেক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মূখীন হবে ইউরোপ। কারণ রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় খোদ ইউরোপের জ্বালানি ব্যবস্থা এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। খবর: আলজাজিরা।  

পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ও ওপেক প্লাস মিলিয়ে ২৩ দেশে বিশ্বের ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য প্রতি মাসেই বৈঠকে বসে ওপেক প্লাসের সদস্যরা। বুধবার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ওপেক প্লাসের বৈঠক শেষে তারা নিশ্চিত করে, দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাবে ওপেক প্লাস, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় দুই শতাংশের সমান।

সম্প্রতি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে রপ্তানিকারকদের। অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম গত জুন মাসে ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলার থেকে এখন মাত্র ৯০ ডলারে নেমে এসেছে। দাম বাড়ায় ব্যবহারও কমেছে। এদিকে তেলের দাম নির্ধারণে ব্যবহƒত ডলারের মূল্যবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জ্বালানি কেনা আরও ব্যয়বহুল করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে তেলের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারের বিশাল সুযোগ পেয়েছে ওপেক প্লাস।

এদিকে ওপেক প্লাসের এ সিদ্ধান্তে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় দেশটি কৌশলে তেল রপ্তানি বাড়িয়ে দেবে। কারণ তেল আমদানির জন্য ইউরোপের বিকল্প দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে। অন্যদিকে কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরব সফর করে তেল উত্তোলন বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু বাইডেনের কথা না রেখে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটটি উল্টো তেলে উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দেয়।

তবে কেউ কেউ বলছেন, ওপেক প্লাসের বাস্তবে এ কর্তনটি শুধু সেই সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য হবে, যারা তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছে বা এর কাছাকাছি রয়েছে। এমইউএফজি ব্যাংকের এহসান খোমানের ধারণা সবশেষ ঘোষণার পরে প্রকৃতপক্ষে দৈনিক ১১ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমতে পারে।

এ বিষয়ে রিস্টাড এনার্জির সাবেক বিশ্লেষক জর্জ লিওন মনে করেন, বছরের শেষ নাগাদ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অধ্যাপক অ্যাডাম প্যানকেটজ বলেন, উৎপাদন হ্রাসের কারণে তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং তেল একটি ‘দুষ্প্রাপ্য পণ্য হতে চলছে’। তিনি বলেন, এটি ইউরোপের পরিবেশগত নীতির জন্য বড় সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এটি ইউরোপের জন্য হুমকি হতে পারে, যদিও আসন্ন শীতে ইউরোপের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ গ্যাস মজুত রয়েছে।

রিস্টাড এনার্জির বিশ্লেষক এমিলি ম্যাকক্লেইন এক নোটে বলেন, ইউরোপের শীতের মৌসুম এখন দৃশ্যমান হওয়ায় গ্যাসের বাজার কিছূটা নমনীয়, কিন্তু ‘এটা কোনোভাবেই আরামদায়ক নয়’।

বৈঠকের পর সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী বলেছেন, বাজার পরিবর্তন না হলে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তবে এ সিদ্ধান্তও ঝুঁকিমুক্ত নয়। চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০২০ সালে উৎপাদন কমানোর ধাক্কা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি ওপেক প্লাস। এর মধ্যে আবারও উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত তেলের বাজারে এ জোটের অংশ আরও কমিয়ে দিতে পারে।

এদিকে ওপেক প্লাসকে ‘রাশিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ’ বলে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, আগামী মাসে নিজেদের কৌশলগত রিজার্ভ থেকে আরও এক কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়বে তারা।