শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বে সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার তকমা পেয়েছে ঘানার চেদি। বিনিয়োগকারীরা চলতি বছর বিদেশি বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়ায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির মুদ্রার এ পতন ঘটে। গত সোমবার এ তথ্য জানায় আফ্রিকার গণমাধ্যম আফ্রিকা নিউজ।
বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ কোকো উৎপাদনকারী দেশটির মুদ্রার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটে। চলতি বছর ডলারের বিপরীতে চেদির দর কমেছে ৪৫ শতাংশ, যা ১৪৮টি দেশের মধ্যে সর্বনিন্ম।
চেদির পতন শুরু হয় ২০২২ সালের শুরুর দিকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দেশটির সরকার গত দুই মাস ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণসুবিধা পাওয়ার চেস্টা করছে। এজন্য সংস্থাটির সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ৩ বছরের জন্য ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলার ঋণসুবিধা ছাড় করবে আইএমএফ।
আইএমএফ ঘানার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সংস্থাটি ঋণ পরিশোধে টেকসই পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এর একজন কর্মকর্তা। তিনি জানিয়েছেন, বেইলআউট সুবিধা পেলে নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য দেশটিকে বিবেচনায় রাখা হবে।
লন্ডনভিত্তিক গেমকর্প ক্যাপিটালের অর্থনীতিবিদ সাইমন কুইয়ানো এক ইমেইলে আফ্রিকা নিউজকে জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীরা গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনের তরফ থেকে ইতিবাচক কিছু শোনার অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনও তেমন কিছু ঘটেনি। আইএমএফের সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক মিটিংয়েও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। একেবারে পিনপতন নীরবতা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন কুইয়ানো।
চলতি বছর ইউরোবন্ড বাজার থেকে প্রবেশাধিকার হারানোর পর এবং দেশীয় আর্থিক নীতির কারণে ঘানার কর্তৃপক্ষ আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। দেশটি সরকারি ব্যয় ৩০ শতাংশ কমানোর পর আন্তর্জাতিক বন্ড বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়। দেশটির শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগকে বিদেশি মুদ্রা ঋণের সুদহার ২ হাজার ৬৬৯ বেসিস পয়েন্টে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
ঘানার সেন্ট্রাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরির তথ্য অনুসারে, আগস্টের শেষে করপোরেট বন্ডের পতন ঘটে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে সর্বনি¤œ। চলতি বছর এপ্রিলে বন্ডের হার সর্বোচ্চ ছিলÑ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
ব্ল–মবার্গের সূচক অনুসারে, দেশটির অভ্যন্তরীণ বন্ডের লেনদেন হয় ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ, যা উদীয়মান দেশগুলোয় সর্বোচ্চ।
গত সেপ্টেম্বরের শেষে ঘানার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন (৬০৬ কোটি) ডলারে। এ অর্থ দিয়ে দেশটি মাত্র ৩ মাসের আমদানি ব্যয় বহন করতে পারবে। এক বছর আগে রিজার্ভ ছিল ১০ দশমিক ৭ বিলিয়ন (১ হাজার ৭০ কোটি) ডলার, যা দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। ঘানার সমস্যার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মিল রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শুধু ঘানাই এ সমস্যায় পড়েনি, আফ্রিকার আরেক দেশ কেনিয়ার মুদ্রারও অবমূল্যায়ন হয়েছে। জুলাইয়ে এক প্রতিবেদনে ব্ল–মবার্গ জানায়, টানা ১৪ মাস ধরে ডলারের বিপরীতে কেনিয়ার মুদ্রা শিলিংয়ের পতন ঘটছে। আগস্টের সাধারণ নির্বাচনের যা চরমে পৌঁছায় এবং পতন অব্যাহত রয়েছে। পূর্ব আফ্রিকার দেশটির বিদেশি মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রেমিট্যান্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গত বছরের তুলনায় তাদের রেমিট্যান্স বাড়ে ১৭ শতাংশ (২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন বা ২০৪ কোটি ডলার)। এ সময়ের মধ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৭ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন (৭৭৩ কোটি) ডলার। গত বছর একই সময় যা ৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন (৭ কোটি ৯৫ লাখ) ডলার। তাদের মাত্র সাড়ে চার মাস আমদানি করার মতো অর্থ রয়েছে, যা পূর্ব আফ্রিকায় সর্বনিন্ম।