Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 2:15 am

বিশ্বে জাহাজ ভাঙার ৫২ শতাংশই বাংলাদেশে

ইসমাইল আলী: করোনার প্রভাব কাটতে শুরু করায় গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি গতি পায়। এ সময় বাড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতের কার্যক্রমেও গতি আসে। এর প্রভাবে গত বছর বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙায় ছিল চাঙা ভাব। আর তা বরাবরের মতো বাংলাদেশ দাপট দেখায়। এ সময় বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জাহাজ ভাঙা হয় বাংলাদেশে।

জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট, ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্বের জাহাজ ভাঙার প্রায় ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ বাংলাদেশের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোয় ভাঙা হয়েছে। আজ বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে আঙ্কটাড।

এতে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৩ লাখ ২৯ হাজার টন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় ভাঙা হয়েছে ৮০ লাখ ২৫ হাজার টন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৪৫ হাজার টন বা ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ ৪৯ হাজার টন বা ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা তুরস্কে গত বছর জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৩৬ হাজার টন বা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া চীনে ভাঙা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টন, যা এক শতাংশেরও কম। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশে জাহাজ ভাঙা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার টন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার ক্ষেত্রে অয়েল ট্যাংকার ছিল ৮২ লাখ ১৩ হাজার টন, বাল্ক ক্যারিয়ার ২৮ লাখ ১৫ হাজার টন, অফশোর ভেসেল ১১ লাখ ৮২ হাজার টন, এলএনজি (তরলীকৃত গ্যাস) ক্যারিয়ার সাত লাখ ৫১ হাজার টন, ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ সাত লাখ ৪৮ হাজার টন, কেমিক্যালবাহী ট্যাংকার ছয় লাখ চার হাজার টন, সাধারণ কার্গো জাহাজ চার লাখ ৪৯ হাজার টন, কনটেইনারবাহী জাহাজ এক লাখ ৭০ হাজার টন এবং অন্যান্য জাহাজ তিন লাখ ৫৬ হাজার টন।

এসব জাহাজের মধ্যে বাংলাদেশে অয়েল ট্যাংকার ভাঙা হয়েছে ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার টন, বাল্ক ক্যারিয়ার ২০ লাখ ১১ হাজার টন, অফশোর ভেসেল এক লাখ ৬০ হাজার টন, এলএনজি ক্যারিয়ার সাত লাখ তিন হাজার টন, ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ এক লাখ এক হাজার টন, কেমিক্যালবাহী ট্যাংকার এক লাখ ৫০ হাজার টন, সাধারণ কার্গো জাহাজ এক লাখ ১৩ হাজার টন, কনটেইনারবাহী জাহাজ ৪২ হাজার টন এবং অন্যান্য জাহাজ এক লাখ ৮২ হাজার টন।

তথ্যমতে, গত বছর তিন ধরনের জাহাজ বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে অয়েল ট্যাংকার ভাঙা হয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, বাল্ক ক্যারিয়ার ৭১ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও এলএনজি ক্যারিয়ার ৯৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এছাড়া অফশোর ভেসেল ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, কেমিক্যালবাহী ট্যাংকার ২৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সাধারণ কার্গো জাহাজ ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ, কনটেইনারবাহী জাহাজ ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং অন্যান্য জাহাজ ৫১ দশমিক ১২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পায়রা বন্দর ছাড়াও চলছে বড় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অবকাঠামো নির্মাণকাজ। পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী সময়ে বাজেটে নানা সুবিধা দেয়ায় আবাসন খাতেও মন্দা কাটতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে দেশে রডের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পেও লোহার ব্যবহার বাড়ছে। এ চাহিদা পূরণে অন্যতম ভূমিকা রাখছে জাহাজ ভাঙা। ফলে এ শিল্পে শীর্ষস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য, ষাটের দশকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট উপকূলে ঝড়ে আটকে যাওয়া জাহাজ কুইন আল পাইন ভেঙে স্থানীয় কয়েকজন পুঁজিপতি এ দেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সূচনা করেন। তারপর ফৌজদারহাট থেকে বারো আউলিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প। পর্যায়ক্রমে এ অঞ্চলে মোট ১৫৪টি জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। যদিও বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান সচল আছে।