বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

আবুল কাসেম হায়দার: বিশ্ব অর্থনীতি এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। দেশে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এই বিশ্ব মন্দা থেকে বাঁচতে পারছে না। ২০১৯ সালে কভিড মহামারি বিশ্ব অর্থনীতির ভিতকে দুর্বল করে ফেলেছে। ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনায় অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলোকে একেবারই দুর্বল করে ফেলেছে। কভিড-পরবর্তী বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হওয়া লগ্নে আবারও বিশ্ব অর্থনীতিতে কালো মেঘের ছায়া পড়তে শুরু করেছে।

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, বিশ্ব ভয়াবহ মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ইতোমধ্যে মন্দাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়নি। অর্থনীতি পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হলেই মন্দা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বছর মার্কিন অর্থনীতি দুই প্রান্তিকে পরপর সংকুচিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে জীবন যাত্রার ব্যয়কে সহনীয় পর্যায় ঠিক রাখা। মূল্যস্ফীতি প্রতিকারহীন ঊর্ধ্বগতি প্রবণতা কমানোর জন্য অধিকাংশ দেশই নীতি সুদের হার বৃদ্ধি করেছে। প্রচলিত অর্থনৈতিক ধারণা বা সূত্র অনুযায়ী নীতি সুদের হার বৃদ্ধি করলে বাজারে মানি সার্কুলেশন কমে আসে। ফলে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে, কিন্তু এবার ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে। কোনো দেশই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না নীতি সুদের হার কমিয়ে দিয়েও। বরং এই ক্ষেত্রে ওইসব দেশে অর্থনীতি আরও বেশি সংকোচিত হয়ে আসছে। এ কারণে শিগগিরই বিশ্বে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা প্রায় নিশ্চিত। অধিকাংশ দেশেই মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রার অনেক ওপরে চলে  গেছে। বিগত ৪০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেনি। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতি গড়ে ৮ শতাংশের ওপরে উঠে গিয়েছে। আমদানি ব্যয়  মেটাতে গিয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।

ভারত এই বছর রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে পড়েছে। জুন’ ২১ মাসে ভারতে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জুলাই’ ২২ এসে তা দাঁড়িয়েছে ৩১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্য ঘাটতির পর ভারতের স্থানীয় মুদ্রার দর পতন ঘটেছে।

যুক্তরাজ্যও এ বছর শেষে মন্দার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নীতি সুদের হার বৃদ্ধি করিয়ে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ উন্নতি করেছে। বিগত ২৭ বছরের মধ্যে নীতি সুদের হার বৃদ্ধি এটাই সর্বাধিক। ইংল্যান্ডের অর্থনীতিবিধরা বলেন, নীতি সুদহার বৃদ্ধি করিয়েও মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি হার ৯ শতাংশের কম রয়েছে। বছর শেষে ১৩ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ তুরস্কে মূল্যস্ফীতি ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ। বিগত ২৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। দেখা যাচ্ছে আগামীতে মূল্যস্ফীতি হবে সব দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি অনেক দেশের পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ: কভিডের প্রকোপ ছাড়াও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে টাল মাটাল করে ফেলেছে। তা কত দিন দীর্ঘায়িত হবে বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চীন-মার্কিন উত্তেজনাও বড় কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্য সাপ্লাই চেইন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেক দেশ বিশেষ করে রুশ-ইউক্রেন খাদ্য রপ্তানিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের দেশের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য ঠিক সময়ে রপ্তানি করতে পারছে না। আবার অনেক দেশ রয়েছে যাদের সামান্যতম খাদ্য উৎপাদন হয় না। সম্পূর্ণ আমদানির ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্ববাজারে খাদ্যের ৩০ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন সরবরাহ করে থাকে। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে উৎপাদন কম হয়েছে। আবার যুদ্ধের ফলে রপ্তানিও করতে পারছে না। এ বছর ইউক্রেনে মোট ৮ কোটি ৬০ লাখ টন খাদ্যপণ্য উৎপাদিত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য উত্তোলন করতে পারবে না। ইউক্রেনের গম এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্যের ওপর মিসর, আফ্রিকার বহু দেশ নির্ভরশীল। রাশিয়া জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে দেয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন দেশে খাদ্য পণ্যের মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি অসহনীয় পর্যায় চলে গিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মার্চ-জুন’ ২২ সময়ে লেবাননের খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৩৩২ শতাংশ। জিম্বাবুয়েতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ২২৫ শতাংশ, ভেনেজুয়েলায় ১৫৫ শতাংশ, তুরস্কে ৯৪ শতাংশ, ইরানে ৮৬ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৮০ শতাংশ এবং আর্জেটিনায় ৬৬ শতাংশ। অতিমাত্রায় মূল্যস্ফীতি দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। খাদ্য ও নিত্যপণ্য আমদানির জন্য এসব দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় হচ্ছে। তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। এসব বিপন্ন দেশের ঋন-জিডিপি অনুপাত উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের অন্তত ৯টি দেশ শ্রীলংকার মতো অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। এর মধ্যে জাম্বিয়া ঋণ জিডিপি অনুপাত ১০৪ শতাংশ হয়েছে। অন্যান্য দেশের মধ্যে মিসরের ঋণ জিডিপি অনুপাত হচ্ছে ৯৫ শতাংশ, কঙ্গোর ৮৩ শতাংশ, রুয়ান্ডার ৭৯ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৬ শতাংশ এবং কেনিয়ার ৭১ শতাংশ। এসব দেশে যেকোনো সময় ঋণখেলাপিতে পড়ে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সবাইকে দিশেহারা করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৫৭ সাল থেকে ২০০৭, ২০০৮ পর্যন্ত ৩৪ বার অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে। কিন্তু অতীতের মন্দার চেয়ে এবার মন্দা ভিন্ন রূপ। এবারের মন্দা সবাইকে বেশ উদ্বেগের ভেতরে ফেলেছে।

বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে? বাংলাদেশ কি বিশ্বের এই পরিস্থিতিতে নিজ দেশের অর্থনীতিকে সামাল দিতে পারবে। সামাল দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। লোড শেডিং দিয়ে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় আকারে রাখার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাস পণ্য আমদানি নিরুসাহিত করা হচ্ছে। সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় বাড়িয়ে ১২ থেকে ২৬টি পণ্যকে করা হয়েছে। ১২৩ পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ এলসি মার্জিন শতভাগ ধরা হয়েছে। এই সব পদক্ষেপ নেয়ার ফলে জুন মাসের তুলনায় , জুলাই ’২২ আমদানি ব্যয় ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্রাস পেয়েছে। এলসি খোলার হার ৩ শতাংশ কমেছে। এদিকে সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমন বন্ধ করেছেন। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। তাতে অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও উপকার আসবে।

সরকার ইতোমধ্যে কিছু কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করার চিন্তা করছে। যেসব প্রকল্প কম গুরুত্ব¡পূর্ণ, সেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ হ্রাস বা বন্ধ করার চিন্তা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন উল্লেখ করেছেন সরকারের গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে ১১টি মেঘা প্রকল্প গুরুত্ব কম। অর্থাৎ এসব প্রকল্প থেকে আয় খুবই কম হবে। কাজেই এই সকল প্রকল্প সরকার সম্পূর্ণ বাদ দেয়ার চিন্তা করতে পারে। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক চাপের কারণে মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে হবে। যেসব প্রকল্প চলমান এসব প্রকল্পের ঋণের কিস্তি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত দেখানো হয়েছে ৩৯ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উক্ত তারিখ পর্যন্ত রয়েছে মাত্র ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকার ৭০০ কোটি ডলার নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে। এটি নিয়ম অনুযায়ী হয়নি। অবশ্য এই ঋণ এক সময়ে সরকার রিজার্ভ ফান্ডে ফেরত নিয়ে আনতে পারে। কিন্তু এই রিজার্ভ পর্যাপ্ত নয়। আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য এই রিজার্ভ কম। অন্যদিকে মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে হলে এই রিজার্ভ সহায়ক হবে না। রিজার্ভ অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। তাই সরকার আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশে পণ্য চাহিদার ২৩ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের প্রধানতম খাত হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প। দ্বিতীয় হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। করোনাকালে রপ্তানি খাত বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। বিগত তিন মাসে রপ্তানি কমেছে। জনশক্তি খাত থেকেও রেমিট্যান্স কম এসেছে। তবে গত মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে।

বিশ্ব মন্দার কারণে বিদেশে কম মূল্যের পোশাকের চাহিদা বাড়তে পারে। বাংলাদেশ এখনও কম মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে। এখন ইউরোপ, আমেরিকাসহ ক্রেতারা কম দামি পোশাক বেশি কিনলে আমাদের দেশে রপ্তানি চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।

প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। কারণ তাতে প্রবাসীরা ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি অর্থ পান। সরকার মার্কিন ডলারের বিনিময় হার মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিলেই বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তখন দেশে রিজার্ভ বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে।

দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার রোধে সরকারের সব পর্যায়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি কমিশনকে আরও বেশি তঃপর ও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্সকে বাস্তবে কার্যকর করতে হবে। অপচয়, দুর্নীতি ও অর্থ বিদেশে পাচার বন্ধ করতে পারলে দেশের দৈন্য অর্থনীতির সবল জোয়ার সম্ভবনা দ্রুত দেখা দেবে। আমাদের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি খুবই সীমিত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি পণ্যে সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানিমুখী সব খাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ কম মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য কোনোভাবে বাড়ানো যাবে না। রপ্তানি কমলে রিজার্ভ কমবে। এখন অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।

কৃষিতে ভর্তুকি সব সময় চালু রাখতে হবে। কৃষিতে ডিজেল ব্যবহার সব রকমের কর প্রত্যাহার করে কৃষক কম মূল্যে ডিজেল, সার, কীটনাশক, বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য ঘাটটি মেটানোর জন্য কৃষি উৎপাদনের কোনো বিকল্প নাই। বাংলাদেশে অর্থনীতির মৌলভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিশ্ব মন্দায় বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এখন কী করতে হবে জরুরি:

ক. ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে জ্বালানি পণ্যের ওপর চাপ কমবে এবং আমদানি ব্যয়ও কমে আসবে। যেহেতু পর্যাপ্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। খ. সিএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে অনুমোদন দেয়া বন্ধ করতে হবে। যে সব কেন্দ্র এখরও চালু হয় নাই। সেইগুলো দ্রুত বন্ধ করার ব্যবস্থা করা উচিত। গ. দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। কোনো রকমের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অনিয়ম থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা ও ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। সঞ্চালন লাইন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন একই সময়ে করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাতে বসে থাকতে না হয়। যেমন এখন ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকার বিরাট অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ঘ. গ্যাস, সিএনজি, কয়লা ও আনবিক পদ্ধতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা থেকে সরে এসে সৌরবিদ্যুৎ বা নতুন কোনো উপায়ে বিদ্যুত উৎপাদনের চিন্তা করতে হবে। ঙ. দেশের নিজস্ব গ্যাস আবিষ্কার, উত্তোলন ও ব্যবহারে অধিক মনোযোগী হতে হবে। চ. জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জ্বালানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞকে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া উচিত।

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, আইএফআইএল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম

aqhaider@youthgroupbd.com