শেয়ার বিজ ডেস্ক: ডিজিটাল মুদ্রা তথা ক্রিপ্টোকারেন্সি-সম্পর্কিত লেনদেন সেবার ক্ষেত্রে আর্থিক ও লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞার পর বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে সূচকে ধস নেমেছে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারগুলোয় বেশিরভাগ শেয়ারের দামে নিম্নগতি লক্ষ করা গেছে। খবর: বিবিসি, রয়টার্স।
বৈশ্বিক স্টক মার্কেটে বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগকারীরা মূল্যস্ফীতির ভয়ে বিনিয়োগ গুটিয়ে নিয়েছেন। মঙ্গলবার দেখা যায়, গত তিন মাসের মধ্যে বিটকয়েনের দাম কমে ৪০ হাজার ডলারে নেমেছে, বিনিয়োগকারীরা যেখানে গতানুগতিক মুদ্রা স্বর্ণ কিংবা ডলারে বিনিয়োগ করছেন।
এ বিষয়ে জেপি মর্গানের বিশ্লেষক নিকোলাস পেনিগার্টুগলো বলেন, আগের দুটি প্রান্তিকের বিপরীতে এ প্রান্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিটকয়েন থেকে ফিরে গতানুগতিক মুদ্রা স্বর্ণ ও ডলারে বিনিয়োগে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, বিটকয়েনের বিনিয়োগ প্রবাহ চিত্রটা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে নিয়মিতই কমে আসছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এপ্রিলের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের এক সভার পর বিটকয়েনের দাম কমতে থাকে। সেখানে বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রা দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ না করার মতো দেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল ইউরোপের শীর্ষ স্টক মার্কেট এসটিওএক্সএক্স ৬০০ সূচক দিনের শুরুতেই এক দশমিক তিন শংতাংশ কমেছে, যা এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সূচকের অবনতি। অন্যদিকে এমএসসিআই গ্লোবাল সূচক শূন্য দশমিক দুই শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। আর এশিয়া প্যাসিফিকের এমএসসিআই ব্রডকাস্ট সূচক জাপানে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং নিক্কেই এশিয়া এক দশমিক তিন শতাংশ সূচক কমেছে, যেখানে হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজিবাজার ছুটির কারণে বন্ধ ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম স্টক মার্কেট ওয়াল স্ট্রিটে গত কয়েক দিনের টানা উত্থানের পর মঙ্গলবার এসঅ্যান্ডপি সূচক শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে প্রথমবারের মতো গত তিন মাসের মধ্যে (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল) বিটকয়েনের দাম সর্বনি¤œ ৪০ হাজার ডলারে নেমেছে, যা গত সপ্তাহে টেসলার প্রধান এলন মাস্কের এক ঘোষণার পর ১০ শতাংশ কমেছে। আর গত তিন মাসের মধ্যে ৪০ শতাংশ কমেছে, যেখানে সোমবার বিটকয়েনের দাম কমেছে ১৩ শতাংশ। আরেক দিন বুধবার বিটকয়েনের দাম হ্রাস পেয়েছে ১৫ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
এদিকে বিটকয়েনের দামের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতের ওপরও। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক চাহিদা এবং এশিয়ায় কভিডের প্রভাবে বাড়তে থাকা জ্বালানির দাম কমেছে।
গতকাল ইউএস ক্রুড অয়েল সূচক এক দশমিক দুই শতাংশ হ্রাস পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৪ দশমিক ৬৯ ডলারে নেমেছে, যেখানে ব্রেন্ট আদর্শে এক দশমিক এক শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৬৭ দশমিক ৯৮ ডলারে নেমেছে।
এদিকে গতকাল দেখা যায়, ডলারের দাম কমেছে। আর ইউরো এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম বেড়েছে। ইউরো তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়ে ১.২২৪৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং ব্রিটিশ পাউন্ড ১.৪১৮১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন নিষেধাজ্ঞা: এদিকে আর্থিক এবং লেনদেন প্রতিষ্ঠানকে ক্রিপ্টোকারেন্সি-সম্পর্কিত লেনদেন সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। বিনিয়োগকারীদেরও ধারণার ওপর নির্ভর করে ক্রিপ্টো বাণিজ্য করার ব্যাপারে সতর্ক করেছে দেশটি।
নিষেধাজ্ঞার অধীনে ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেন সেবাদাতাসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকদের ক্রিপ্টোকারেন্সি-সম্পর্কিত সব ধরনের সেবা দিতে মানা করা হয়েছে, যেমনÑনিবন্ধন, বাণিজ্য, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট। মঙ্গলবার তিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এক যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টি জানিয়েছে।
যৌথ বিবৃতি প্রদানকারী তিন শিল্প কর্তৃপক্ষ হলো ‘ন্যাশনাল ইন্টারনেট ফাইন্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অব চায়না’, ‘চায়না ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘পেমেন্ট অ্যান্ড ক্লিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব চায়না’।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য অনেক ওপরে উঠেছে ও কমেছে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারণানির্ভর বাণিজ্য ফিরে এসেছে, গুরুতরভাবে মানুষের সম্পদ সুরক্ষা লঙ্ঘন করছে এবং স্বাভাবিক অর্থনীতি ও আর্থিক শৃঙ্খলাকে বিঘিœত করছে।
যদিও চীন আগেই ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময় এবং প্রাথমিক কয়েন অফারিং নিষিদ্ধ করেছে, তবে ব্যক্তিপর্যায়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংগ্রহে রাখা নিষিদ্ধ করেনি।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা রাখতে পারবে না, ক্রিপ্টোকারেন্সি-সম্পর্কিত কোনো সেবা দিতে পারবে না, এমনকি ক্রিপ্টোকারেন্সি-সংশ্লিষ্ট কোনো আর্থিক পণ্যও দিতে পারবে না। বিবৃতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাণিজ্যের ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে, ভার্চুয়াল কারেন্সি আসল মূল্যমান দ্বারা সমর্থিত নয়, এগুলোর দাম খুব সহজেই বিকৃত করা যায় এবং এর বাণিজ্য চুক্তি চীনা আইন দ্বারা সুরক্ষিত নয়।