বিসিক শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে জোর দিন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।  ১৯৫৭ সালে তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন নামে সরকারি প্রতিষ্ঠান গঠনের লক্ষ্যে তদানীন্তন গণপরিষদে বিল উত্থাপন করেন। ওই বছরের ৩০ মে পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি স্বাধীনতা-উত্তরকালে বিসিক নাম ধারণ করে। বর্তমানে বিসিক বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র কুটির ও গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান সরকারি প্রতিষ্ঠান। বাস্তবতা হলো সমস্যা, সংকট অব্যবস্থাপনায় এটি প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছে না। সম্প্রতি বিসিকেরই এক গবেষণায় উঠে এসেছে, সংস্থার সেবায় ২০ শতাংশ উদ্যোক্তা অসন্তুষ্ট। বিসিক শিল্পনগরীগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশ কারখানায় গ্যাস-সংযোগ নেই। অধিকাংশ শিল্পনগরীতে নেই সংস্থার নিজস্ব পানি সরবরাহ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিসিকের নিজস্ব উদ্যোগে করা গবেষণায় এ অসন্তুষ্টির কথা জানান উদ্যোক্তারা। বিসিক শিল্পনগরীগুলোর বিদ্যমান অবস্থা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে উদ্যোক্তাদের ওপর এ গবেষণা চালিয়েছে সংস্থাটি। গত জুন মাসে গবেষণা প্রতিবেদনের ফল প্রকাশ করা হয়।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর বিষয়ে সাধারণ অভিযোগ, নিজেদের কর্মের মূল্যায়ন করে না। ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে নিজেদের সাফল্য প্রচার করে। অদক্ষতা ও সীমাবদ্ধতা আড়াল করার প্রয়াসও লক্ষণীয়। এদিক থেকে বিসিক প্রশংসা পেতেই পারে। নিজেদের কাজ মূল্যায়ন করেছে, গবেষণা করেছে। শুধু তা-ই নয়, গবেষণার ফল প্রকাশ্যে এনেছে তারা। তাই আশা করা যায়, সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিসিকের গবেষণায় কেবল উদ্যোক্তাদের বক্তব্য নেয়া হয়নি। নিজেদের কর্মকর্তাদেরও মত নেয়া হয়েছে। সারাদেশে বিসিকের ৭৯টি শিল্পনগরীর মধ্য থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ৩৮টি শিল্পনগরীর ৪০০ জন উদ্যোক্তা ও ৩৬টি জেলা কার্যালয়ের ৫৪ জন কর্মকর্তা- প্রতিনিধির মতামত নেয়া হয়েছে। তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার পাশাপাশি সরেজমিন এসব শিল্পনগরী পরিদর্শন করেও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে বিসিক।

জানা যায়, ৩৮টি শিল্পনগরীর ১৮২টি প্লট এখনও অব্যবহƒত পড়ে আছে। রুগ্?ণ কারখানা ৩৩৮টি। এর মধ্যে ঢাকায় ১৬৭টি, চট্টগ্রামে ৮৪টি ও খুলনা অঞ্চলে ৪৫টি রুগ্ণ শিল্প রয়েছে।

ঢাকার জামদানি, লক্ষ্মীপুর ও পাবনা বিসিক শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক ও নালার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। অধিকাংশ শিল্পনগরীর নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। একটু বৃষ্টি হলেই নালার ময়লা পানি রাস্তায় এবং কখনও কখনও কারখানায় ঢুকে যায়। কারখানার সীমানাপ্রাচীর, সড়কবাতি ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা করা গেলে নারী শ্রমিকরা বাড়ি থেকেই নিরাপদে কর্মস্থলে আসতে পারবেন। বিসিক শিল্পনগরী শিল্পের  বিকেন্দ্রীকরণে ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।